ইউজিসির নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না
সমাজবিজ্ঞানে শিক্ষক নিয়োগ, ‘বোর্ড এক্সপার্ট’ জাপানিজ স্টাডিজের
- টিডিসি রিপোর্ট
- ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৫:০৪
আগামী রবিবার (১৭ আগস্ট) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্ভুক্ত সমাজবিজ্ঞান বিভাগে একজন প্রভাষক নিয়োগের (বোর্ড) ভাইভা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের দুজন শিক্ষককে এক্সপার্ট হিসেবে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। অন্যজন হলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. ফাতেমা রেজিনা ইকবাল।
অভিযোগ উঠেছে, বেরোবি উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. শওকত আলীর নিজ ইচ্ছায় এই নিয়োগ বোর্ডে তার ঘনিষ্ঠ ড. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বোর্ডের এক্সপার্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য নেই। সমাজবিজ্ঞান-সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বোর্ডে না রেখে জাপানিজ স্টাডিজের শিক্ষককে বোর্ডে রাখায় এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক শুরু হয়েছে। পাশাপাশি অধ্যাপক নন এবং ভুল তথ্য দিয়ে ঢাবিতে পদোন্নতি ও চাকরি স্থায়ীকরণের অভিযোগ থাকা এমন একজন শিক্ষককে বোর্ডে রাখায় অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা।
শুধু তাই নয়, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে বেরোবি প্রশাসন এই শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড আয়োজন করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইউজিসির নির্দেশনার আগেই প্রকাশ করা হয়েছিল।
ইউজিসির সূত্র জানায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অনুসরণীয় গাইডলাইনসহ একটি পরিপত্র গত ২৮ মে ইউজিসি জারি করে। ইউজিসির অর্থ, হিসাব ও বাজেট শাখার পরিচালক রেজাউল করিম হাওলাদার স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে স্পষ্টভাবে শিক্ষা ছুটির বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ না দিতে বলা হয়েছে। আর শিক্ষক নিয়োগ দিলেও সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ইউজিসির পূর্বানুমিত নিতে হবে। অন্যথায় এ খাতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলেও পরিপত্রে সতর্ক করা হয়।
এই পরিপত্র জারি সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইউজিসির পরিপত্রকে উপেক্ষা করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষা ছুটির বিপরীতে একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড ইস্যু করে। ১৭ আগস্ট ইউজিসির নির্দেশ অমান্য করে একজন শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত হবে।
আরও পড়ুন: ভুল তথ্য দিয়ে চাকরি স্থায়ী করার অভিযোগ ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে
এদিকে ঢাবির জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। জার্নালে ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লেখা প্রকাশিত হয়েছে’ এমন ভুল তথ্য দিয়ে পদোন্নতি ও চাকরি স্থায়ীকরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সময়মতো লেখা প্রকাশ করতে না পেরে সংশ্লিষ্ট জার্নালের এডিটরের সঙ্গে যোগসাজশে ‘অনৈতিক পন্থায় ভুয়া তারিখ’ দেখিয়ে চাকরি স্থায়ী ও বিভাগে জ্যেষ্ঠতা ধরে রাখার অভিযোগে গত মার্চ মাস আগে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন একই বিভাগের শিক্ষক ও বিভাগটির সাবেক চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। পরে এ ঘটনায় ইউজিসি থেকে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। ঢাবির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তালিকায়ও তার নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেরোবির এক শিক্ষক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ইউজিসির সুস্পষ্ট নির্দেশনার পরও শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড করাটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী এমন অনিয়ম এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। এ ব্যাপারে ইউজিসির হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষককে এক্সপার্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়াটা যৌক্তিক নয়। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষক নিয়োগ মূল্যায়নে ভুল হতে পারে। কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বাইরে কাউকে এক্সপার্ট রাখাটা সমুচিত নয়।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইউজিসির নির্দেশনার আগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এটি। আর বোর্ড এক্সপার্টের ব্যাপারে যে অভিযোগ, সেটি সঠিক হলে বোর্ড স্থগিত করা হবে।
এ বিষয়ে ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে আমরা সেটি খতিয়ে দেখব এবং ঘটনার সত্যতা পেলে বিধি অনুযায়ী ইউজিসি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’