কলেজ গ্রন্থাগারে থাকা শেখ মুজিব-হাসিনার বই পোড়ালেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা

শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুরের বই পোড়াচ্ছেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা
শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুরের বই পোড়াচ্ছেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা © ভিডিও থেকে নেওয়া

মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের লাইব্রেরিতে থাকা শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত বই পুড়িয়ে দিয়েছেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক মো. তুহিন ও সদস্য সচিব মো. জুয়েল নূরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বইগুলো পোড়ান। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পোড়ানো বইগুলোর মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সাধারণ জ্ঞান ও নানা বিষয়ে লেখা অনেক বইও ছিল। এ ঘটনার একটি ভিডিও দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রদল নেতা তুহিনের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতাকর্মী বই পোড়াচ্ছে। ছাত্রদল নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘যে হাসিনার কারণে গুলি খাইছি, জেল খেটেছি- তার বই থাকবে না।’ এ সময় কলেজের অধ্যক্ষের সামনে আঙুল তুলে কথা বলার প্রতিবাদ করতে দেখা যায় দুজন শিক্ষিকাকে। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে ছাত্রদল নেতার বাকবিতণ্ডাও করতে দেখা যায় ভিডিওতে। 

জানা গেছে, ছাত্রদল নেতাকর্মীরা লাইব্রেরীতে থাকা বইগুলো কলেজের মাঠে এনে আগুন ধরিয়ে দিলে কলেজের অধ্যক্ষ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তারা বলেন, এখানে শুধু আওয়ামী লীগের বই নয়, আরও গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে। সেগুলো আগে আলাদা করে রাখা হোক, কলেজের হিসাব অনুযায়ী পরে নির্ধারণ করা হবে, কোন বই ফেলা হবে।

সে সময় ছাত্রদল নেতা তুহিন বলেন, ‘যে হাসিনার জন্য জেল খাটছি, তার বই থাকবে লাইব্রেরিতে?’ পরবর্তীতে অধ্যক্ষের সামনে আঙুল তুলে কথা বললে কয়েকজন শিক্ষিকা প্রশ্ন করেন, ‘আপনি স্যারকে আঙুল তুলে কেন কথা বলছেন?’ জবাবে তুহিন তাদের সঙ্গেও তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং বলেন, ‘আপনি আমাকে চেনেন?’ শিক্ষিকারা তখন বলেন, ‘তোমাকে চেনার কিছু নেই, তুমি আমাদের ছাত্র, এর বাইরে তোমার আর কোনো পরিচয় নেই।’

আরও পড়ুন: প্রেস সচিবের এক বছর, ডাস্টবিন ও বনসাই ইস্যুসহ যেসব প্রশ্নের জবাব দিলেন

ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বই সরানোর প্রয়োজন হলে অধ্যক্ষকে জানালে তারা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে বই সরিয়ে ফেলতেন। কিন্তু বই সরাতে এসে মব তৈরি করে শিক্ষকদের হেনস্তা করার তীব্র নিন্দা জানান তারা। এ সময় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানা শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এইচ এম ওয়ালি উল্যাহ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা অফিসে একটা মিটিং করছিলাম। তখন শুনলাম ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের বই বের করে পোড়াচ্ছে। আমিসহ কয়েকজন শিক্ষক সেখানে গিয়ে তাদের বই পোড়াতে নিষেধ করি এবং আইন নিজের হাতে না নেওয়ার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করি। পরে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।’

বিষয়টি নিয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. জুয়েল নূর দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গত ৫ তারিখে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষ মুছে ফেলেছে। কিন্তু কলেজ প্রশাসন এখনও লাইব্রেরিতে হাসিনার বই রেখে আমাদের জুলাই নিহতদের সঙ্গে বেইমানি করেছে। তাই আমরা কলেজে গিয়ে নিজ উদ্যোগে বইগুলো বের করেছি। আমরা শুধুমাত্র ইতিহাস বিকৃত বইগুলো পুড়িয়েছি, এর বাইরে আর কোনো বই নষ্ট করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কলেজ প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই এই ঝামেলাটি তৈরি হয়েছে। তারা যদি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বইগুলো সরিয়ে ফেলত, তাহলে আমাদের হস্তক্ষেপ করার দরকার হতো না।’