আনোয়ারায় হাতির আক্রমণে ২০ দিনে ৭ জিডি, জানেন না স্থানীয়রা

আনোয়ারা থানা
আনোয়ারা থানা © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় আবারও বন্য হাতির আতঙ্ক ফিরে এসেছে। সাড়ে তিন মাস চুনতি অভয়ারণ্যে থাকার পর গত ২০ জুলাই (রবিবার) হাতির একটি পাল দেয়াঙ পাহাড়ে ফিরে আসে। তারপর থেকেই প্রায় প্রতিদিন খাবারের খোঁজে লোকালয়ে নেমে আসছে হাতি।

এতে আনোয়ারা–কর্ণফুলী উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ ও কেইপিজেডের প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গত ৭ বছরে হাতির আক্রমণে নারী-শিশুসহ ২৪ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে শত শত বসতবাড়ি, দোকানপাট ও ফসলি জমি।

আনোয়ারা থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাতি ফেরার পর গত ২০ দিনে থানায় ৭টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। হাতির আক্রমণে ফসলি ক্ষেত, বাড়ির সীমানাপ্রাচীরসহ নানা স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানা যায়।

তবে স্থানীয়দের দাবি, এসব ঘটনার বেশিরভাগ সম্পর্কেই তারা অবগত নন। কেবল গত ৫ আগস্ট (সোমবার) স্থানীয় ইআরটি টিমের সদস্য আবু বক্কর হাতির আক্রমণে আহত হন।

স্থানীয় বাসিন্দা জে এম জাবেদুল ইসলাম বলেন, “থানা থেকে বলা হচ্ছে, ৭টি জিডি হয়েছে। কিন্তু ইআরটি সদস্য আবু বকর আহত ছাড়া আর কোনো জিডি হয়েছে কিনা জানা নেই। জিডি যদি হয়েই থাকে, তাহলে সেগুলোর তথ্য নেই কেন?”

আরেক বাসিন্দা ফরহাদুল ইসলাম বলেন, “এমন ঘটনা ঘটলে আমরা জানবই, কিন্তু বেশ কিছু অভিযোগের ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানা নেই।

এদিকে কেইপিজেডের আশেপাশের এলাকাবাসী জানিয়েছে, ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর বন্য হাতির পাল দেয়াঙ পাহাড়ে আসে ও ফিরে যায়। কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে তারা স্থায়ীভাবে এখানে অবস্থান শুরু করে। বর্তমানে কেইপিজেডের দেয়াঙ পাহাড়ের লেক এলাকাই হাতির স্থায়ী আস্তানা হয়ে গেছে। দিনের বেলায় তারা লেকে থাকলেও সন্ধ্যা নামলেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে তাণ্ডব চালায়।

স্থানীয় বৈরাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও হাতি নিরাপদে ফিরিয়ে নেওয়ার আন্দোলনকারী এডভোকেট নুরুল আজিম বলেন, “চুনতি অভয়ারণ্যে ফেরার সাড়ে তিন মাস পর হাতিরা আবার আনোয়ারায় ফিরে এসেছে। এতে মানুষের মধ্যে পুরনো আতঙ্ক নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।”

বিষয়টি নিশ্চিত করে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনির হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস-কে বলেন,“হাতি ফেরার পর ৭টি জিডি হয়েছে। হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা অভিযোগ করলে, অভিযোগ থানায় ডায়েরিভুক্ত করা হয় এবং বিষয়টি তদন্ত শেষে বন বিভাগে ক্ষতিপূরণের জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়।”

বাঁশখালী জলদী বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, “হাতির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিবো? হাতি তো যাওয়া আসা করছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি, গেল জুন মাসে ১৩০ জনকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছি।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা উপজেলা থেকেই মন্ত্রণালয়ে যায় এবং তারা উপজেলার প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ হাতে পান৷ আমরা এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক বনবিভাগের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। 

তিনি আরও বলেন, “হাতিকে সরানো সহজ নয়, আগে থেকে যেভাবে চেষ্টা করা হচ্ছিল, সেভাবেই বনবিভাগের ইআরটি টিমের সদস্যরা কাজ করছেন।”