তারেক রহমানের দেশে ফেরা: পর্ব-১

প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম
প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম © টিডিসি সম্পাদিত

জাতি, রাষ্ট্র এবং জনগণের সংকটে দৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রাচীন চীনা দার্শনিকের মতে লিডারশিপের সংজ্ঞা-“শ্রেষ্ঠ নেতা সে-ই, যার অধীনে কোনো কিছু অর্জিত হলে তার সাথে জড়িত প্রতিটি মানুষই ভাবে যে তারা সবাই মিলে কাজটি করেছে।” অর্থাৎ নেতার কর্মকাণ্ড অন্যদের আরও স্বপ্ন দেখতে, আরও শিখতে, আরও কিছু করতে এবং আরও বেশি কিছু হতে অনুপ্রাণিত করবে। বিশ্বের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা তার কর্মযজ্ঞের একক কৃতিত্ব নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। বাংলাদেশে এ ধরনের বৈশিষ্ট্যের নেতার মূর্ত প্রতীক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি জনগণের কাছে গিয়েছেন, জনগণের জন্য কাজ করেছেন। এজন্য একক কৃতিত্ব গ্রহণ করার ইতিহাস নেই। সৎ ও সাহসী হবেন নেতা। জিয়াউর রহমান বারবার দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। জীবনযাপন রাষ্ট্র পরিচালনা ছিলেন সৎ ও মহৎ। একই বৈশিষ্ট্য রয়েছে আপসহীন নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে। জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার উত্তরসূরি তারেক রহমানের মধ্যেও সর্বতভাবে উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান বা পরিলক্ষিত হয়। তারেক রহমান যেন ‘প্রমিথিউস’ যিনি সর্বসাধারণের বিশ্বাস আর আস্থার জায়গা এবং কল্যাণের পরম বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।

বগুড়াতে সদস্য পদ লাভের মধ্য দিয়ে ১৯৮৮ সালে তারেক রহমান রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু বিএনপি সরকার গঠন করলেও পরবর্তীতে তিনি কম সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়, দলের তৃণমূল এবং সিনিয়র নেতৃত্ব তারেক রহমানকে বগুড়া থেকে একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তৃণমূল পর্যায়ে তার কাজকে আরও এগিয়ে নেওয়া এবং তার মায়ের জন্য নির্বাচনী প্রচারণার সমন্বয় করার লক্ষ্যে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে, তারেক রহমান সরকারের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ২০০১ সালে বিএনপি’র নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করে। ক্রমশই দলের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন, অংশগ্রহণ করতে থাকেন দলীয় নানা কর্মকাণ্ড। দেশের বিভিন্ন জেলায় দলীয় অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হন। তার সেই উপস্থিতি সাধারণ জনগণসহ নেতাকর্মীদের ভীষণভাবে উজ্জীবিত করে। জুন ২০০২ সালে, তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটি কর্তৃক সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব নিযুক্ত হন। এসময় দেশের প্রতিটি জেলায় তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলনের পাশাপাশি বিভাগীয় সম্মেলন এবং উপজেলা সম্মেলন নামে কর্মসূচি চালু করেন। 

২০০৭ সালে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের প্রি-মিটকুলাস ডিজাইনে মইন-ফখরুদ্দিন আহমেদ সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমানকে কারারুদ্ধ করা হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে তারেক রহমান প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি পান। ২০০৯ সালে বিএনপির ৫ম জাতীয় কাউন্সিলে তাকে দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। ২০১৬ সালে পুনরায় সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা মিথ্যা মামলার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিলে ২০১৮ সাল থেকে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। 

অর্থাৎ ২০০৮ সালে তারেক রহমানকে নির্বাসনে বাধ্য করা হয়েছিল। ১৭ বছরের নির্বাসন সময়ে তারেক রহমান ও তার পরিবার ভয়াবহ হামলা-মামলা, জেল-জরিমানা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তিনি তার ছোট ভাই নির্যাতিত আরাফাত রহমান কোকোকে হারিয়েছেন। মামলার জাল ও রাজনৈতিক জিঘাংসার শিকার হয়েও তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ নির্মাণের। দলের মধ্যে তার নেতৃত্ব আরো বেশি বলিষ্ঠ থেকে বলিষ্ঠতর হতে থাকে। মূলত বিএনপি বেঁচেছিল কিংবা বিভাজন থেকে রক্ষা পেয়েছিল তারেক রহমানের ক্যারিসম্যাটিক লিডারশিপের জন্য। অর্থাৎ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের শত চাপ সত্বেও, তারেক রহমান তার দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

জাতীয় ভয়াবহ সংকটকালে, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর পরবর্তী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে হতাশায় নিমজ্জিত নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্জাগরণ ঘটে। তিনি বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন এমন একটা সময়ে, যখন দেশটা ‘বাকশাল’ নামে এক জংলি শাসনব্যবস্থার কবলে পড়েছিলো। এই মানুষটিই সব দলের রাজনীতি করার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন; প্রবর্তন করেছিলেন একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্রের। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, সেনাপ্রধান, সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা-বীরোত্তম। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদই হবে রাজনীতির মূল ভিত্তি, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনই হবে রাজনীতির মূল লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্যে তিনি কাজ করে গেছেন নিরলস ভাবে। তেমনি আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জাতিকে একতাবদ্ধ করেন। 

আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসা শেষে ৬ মে দেশে ফিরেছেন। চিকিৎসা নিতে যাওয়া-আসার দৃশ্যের মধ্য দিয়ে তিনি যে সর্ববৃহৎ দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী তা বিশ্ববাসী জেনেছেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় না থেকেও কাতারের আমীরের দেওয়া রাজকীয় এয়ার এম্বুলেন্সে লন্ডন গমন এবং ফিরে আসার সময় দলমত নির্বিশেষ জনতা কর্তৃক ভালোবাসায় সিক্ত এবং আন্তরিক অভ্যর্থনা বাংলাদেশের এক নতুন ইতিহাস। মূলত বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। তিনি দেশের সংকট সন্ধিক্ষণে জাতিকে বারবার ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানে জানিয়েছেন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশে একতা এবং স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠায় তিনি এবং তারেক রহমান পালন করেছেন অপরিসীম ভূমিকা। এটা স্পষ্ট যে, খালেদা জিয়ার পরে বিএনপিতে একজন মাত্র নেতাই আছেন, যাঁর আহ্বানে পুরো জাতি সাড়া দেবে-তিনি হলেন তারেক রহমান। তারেক রহমান দেশে ফিরে এলে তার প্রত্যক্ষ উপস্থিতি এই নেতৃত্ব আরো সুদৃঢ় এবং শক্তিশালী হবে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একজন তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব খুবই জরুরি। 

গত এক দশকে বিএনপি যার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে তিনি তারেক রহমান। তিনি একা কোনো সিদ্ধান্ত নেন না। দেশ ও দলের সিদ্ধান্তসমূহ পার্টির বিভিন্ন স্তরে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বৃহৎ বড় একটি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তার ডাইন্যামিক ও ক্যারিশম্যাটিক লিডারশিপ তুলনাহীন। এমনকি দেশে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্লাটফর্মে একত্রিত করে আন্দোলন সংগ্রামে নিয়ে আসার বিষয়টিও ছিল অভাবনীয়। এর চরম দৃষ্টান্ত হলো- ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ড্যামি নির্বাচন বর্জন। সর্বজনের ঘৃণায় পর্যবসিত হয় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার সরকার। সর্ববৃহৎ সরকার বিরোধী দল বিএনপি’র ম্যাকানিজমে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদ বৃহত্তর ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল বলেই ৫ আগস্ট (২০২৪) ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সফল হয়। চরম গণ বিস্ফোরণের মুখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। 

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী গত নয় মাসে বাংলাদেশে নানারকম বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। এরকম একটা প্রেক্ষাপটে একজন ভালো, সৎ, দক্ষ, জনবান্ধব নেতার উপস্থিতি মানুষ কামনা করে। এক্ষেত্রে তারেক রহমানের বিকল্প কাউকে দেখা যায় না। ১৩ জুলাই ২০২৩ তারিখে তারেক রহমান রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফার রূপরেখা ঘোষণা এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত জাতীয় সরকারের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ব্যক্ত করেন। অর্থাৎ ৫ আগস্ট ২০২৪-এর বহু আগেই কাগজে কলমে মননে উপলব্ধিতে সংস্কার ভাবনা সাংগঠনিকভাবে জাতির সামনে তিনি উপস্থাপন করেছেন। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রকৃতপক্ষে বিএনপি প্রতিষ্ঠা থেকেই সংস্কারের কথা বলে এসেছে। প্রতিনিয়ত সংস্কার নিয়ে কাজ করছে দলটি। 

তারেক রহমান দেশে ফিরে এলে ত্বরিত গতিতে ও পর্যায়ক্রমে দেশের মানুষের মনের ভেতর ৩১ দফা সঞ্চারিত করতে পারবেন। প্রত্যক্ষ সংযোগে সংলাপ-বক্তৃতা-বিবৃতিতে ৩১ দফাকে ছড়িয়ে দিতে নেতাকর্মীরা মোটিভেটেড হবেন। রাষ্ট্র গঠনে এই কাজটি করার জন্য তারেক রহমানকে দেশে আসতে হবে। তার ফিরে আসা জরুরি এজন্য যে, ৬ হাজার কিলোমিটার দূরে থেকেও দেশ রক্ষা ও দেশ গঠন এবং দলের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই কিন্তু জনবান্ধব নেতার বৈশিষ্ট্য হলো মাঠ পর্যায়ের উপস্থিতি। তারেক রহমানের আস্থা যেমন জনগণের উপর তেমনি তার উপরও জনগণের নির্ভরশীলতা। এজন্য দেশে ফিরে জনমানুষের সঙ্গে সমন্বয়সূত্রে রাষ্ট্র পুনর্গঠনে বড় ভ‚মিকা রাখতে পারবেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা বড় বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে আগস্ট মাস থেকেই। কারণ ৫ আগস্টের (২০২৪) গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য পলাতক শেখ হাসিনাসহ দেশি-বিদেশি চক্র ও আমলাতন্ত্র বারবার প্রতিবিপ্লবী হয়ে উঠার চেষ্টা করেছে। ৮ আগস্টে (২০২৪) ড. ইউনূস সরকার গঠনের পর হাসিনার দল এবং নেতা-কর্মীরা ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা চালাতে থাকে। তারেক রহমানের সতর্ক দৃষ্টির প্রতিফলনে তার দল বিএনপি অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবেলা করেছেন, নস্যাৎ করে দিয়েছেন সকল ষড়যন্ত্র। 

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধীচক্র, আওয়ামী লীগের সমর্থক, ভারতীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী আমলা এবং পাকিস্তান-আমেরিকা ও চীনের বিরুদ্ধে সক্রিয় এজেন্ট প্রতিবিপ্লবীরা ভেতরে-বাইরে গোপনে প্রকাশ্যে চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে। কিংবা উৎখাত তৎপরতায় বিকল্প সরকার গঠন ও তাদের তাঁবেদারি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার অপতৎপরতায় লিপ্ত আছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ারই একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। মানুষ এখানে দরিদ্র, মধ্যবিত্তের উচ্চাভিলাষ এখানে অপরিমিত, ড. ইউনূসের শত্রুরা এখানে তৎপর, হাসিনার আমলারা রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রে পুনর্বাসিত। সুতরাং প্রতিবিপ্লবী অপশক্তির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বারবার। ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ জন্ম নিয়েছে ড. ইউনূস সরকারের মধ্যে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে দুর্নীতি এখনো সর্বত্রই বহাল। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ফ্যাসিস্ট দোসর আছে বলে, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভেতর থেকে শক্তি পাচ্ছে না। ফলে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। বহু ঘটনা পত্রিকায় আসছে না। মানুষ আতঙ্কিত, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তারেক রহমান দেশে ফিরে এলে তার উপস্থিতির সৎ ও মহৎ প্রচ্ছায়া প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দল, জনসাধারণ, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে। পরিবর্তন আসবে সংস্কার ব্যবস্থায়। প্রকৃতপক্ষে অন্যায়-অসততা ও বিরূপ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সম্মুখসারির প্রথম ঝাণ্ডাধারী হিসেবে জনগণ দেখতে চায় তারেক রহমানকে।

বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেছেন ড. ইউনূস সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু বর্তমানে সফলতা ও ব্যর্থতার মাঝামাঝি অবস্থানে আছে এই সরকার। সরকারের ভেতরেও বিভক্তি লক্ষণীয়। একটি পক্ষ চাচ্ছে, নির্বাচন যথাসময়ে হোক, অন্য পক্ষ নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। ফলে ‘তর্কের খাতিরে তর্ক’ সৃষ্টি হচ্ছে; ‘জল ঘোলা করে মাছ শিকারে’র চেষ্টা রয়েছে। ছাত্র প্রতিনিধিদের দল-এনসিপি কিংস পার্টি হিসেবে ইতোমধ্যে খ্যাত হয়েছে। ২ মে(২০২৫) তাদের বায়তুল মোকররমের সমাবেশের বক্তব্য অনুসারে বলা যায়, তারা নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট কথা না বলে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক বিতর্কে বেশি উৎসাহী। তাদের মনোভাব বিশ্লেষণে বলা যায়, তারা বর্তমান সরকারকে আগামী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ক্ষমতায় রাখতে চাচ্ছে। সংস্কারের নামে নির্বাচন প্রলম্বিত করার অপপ্রয়াস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলসমূহের প্রধান দাবি যথাসময়ে নির্বাচন ও দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। এসবের যৌক্তিক সমাধানে ও দৃঢ় মতামত প্রদান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঘোষণা অনুসারে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সুপথে আনতে ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বাস্তবায়নে তারেক রহমানের দেশে উপস্থিতি জরুরি। (১ম পর্ব সমাপ্ত)

লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়