বইপ্রেমের দিন আজ, ৯ আগস্ট ‘বুক লাভার্স ডে’

বুক লাভার্স ডে
বুক লাভার্স ডে © সংগৃহীত

প্রযুক্তির ঝড়ে যখন কাগজের বইয়ের গন্ধ হারাতে বসেছে, তখন বিশ্বজুড়ে বইপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য দিন ‘বুক লাভার্স ডে’ আবার মনে করিয়ে দেয়—মানুষের সেরা বন্ধু এখনও বই। প্রতিবছর ৯ আগস্ট দিনটি উদ্‌যাপিত হয় বইপ্রেম, পাঠাভ্যাস ও সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য। বই শুধু তথ্যের ভাণ্ডার নয়; এটি মানুষের আবেগ, চিন্তা ও কল্পনারও আশ্রয়। ইতিহাস বলে, বই মানুষকে সভ্য করেছে, নতুন জগৎ চিনিয়েছে, অন্ধকারে আলোর পথ দেখিয়েছে। একসময়ের হাতে লেখা পুথি থেকে শুরু করে আজকের ছাপাখানার কাগজে মুদ্রিত বই—সবই মানুষের জ্ঞানযাত্রার সঙ্গী। কিন্তু স্মার্টফোন, ট্যাব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিড়ে হাতে বই নিয়ে পড়া অনেকের কাছেই বিলাসিতা হয়ে উঠছে।

‘বুক লাভার্স ডে’ মূলত পাঠকদের উৎসাহিত করার জন্য একটি অনানুষ্ঠানিক দিবস। এদিন মানুষকে আহ্বান জানানো হয়—ব্যস্ততার মাঝে অন্তত কিছু সময় বইয়ের পাতা উল্টানোর জন্য। এটি শুধু পাঠাভ্যাস ফিরিয়ে আনার আহ্বান নয়; বরং বইকে জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করার একটি সুযোগও বটে।

বিভিন্ন দেশে এদিন লাইব্রেরি, বইয়ের দোকান, পাঠক সংঘ, স্কুলকলেজ ও সাহিত্য সংগঠন নানা আয়োজন করে। কোথাও বই বিনিময় কর্মসূচি, কোথাও লেখক-পাঠক আড্ডা, আবার কোথাও সাহিত্য পাঠচক্র। অনলাইনেও এই দিনে বই-সংক্রান্ত বিশেষ অফার, রিভিউ শেয়ার, বই সুপারিশের মতো আয়োজন চলে।

বাংলাদেশে বই প্রেমের অন্যতম বড় উদ্‌যাপন ‘একুশে বইমেলা’। তবে ‘বুক লাভার্স ডে’ তুলনামূলক কম প্রচলিত হলেও, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এ দিবসের প্রতি সচেতনতা বাড়ছে। দেশের অনেক বইপাগল পাঠক এদিন প্রিয় বই হাতে ছবি শেয়ার করেন, প্রিয় লাইন উদ্ধৃত করেন এবং নতুন পাঠযাত্রা শুরু করেন।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, দিনে অন্তত ২০ মিনিট বই পড়া মনোযোগ বৃদ্ধি করে, মানসিক চাপ কমায়, ভাষাজ্ঞান উন্নত করে এবং সৃজনশীলতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পাঠ মানুষের সহানুভূতি ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাও উন্নত করে।

বই প্রেমিক মাসুদ হাসান বলেন, ‘‘বই হলো মানুষের পরম বন্ধু। তাই বই মানুষের একাকিত্বের সঙ্গী। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের বিচক্ষণতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। বইয়ের জ্ঞান হলো অজ্ঞতার আলো। বই প্রেমি মানুষরা উদাসীন মনের অধিকারী হয়। তা আমি বলবো, বাংলাদেশের সকল ধরনের অন্যায়, অবিচার ও কুসংস্কার দূরীকরণে সবার বই পড়ার প্রতি অনুরাগী হওয়া উচিত।’’

আরেক বই প্রেমিক ও লেখক মাহমুদা রানী বলেন, ‘‘বই হচ্ছে মানুষ এর এমন এক বন্ধু যার নিঃশব্দ প্রেমে পরিপূর্ণ হয় জ্ঞান ভাণ্ডার। পরিস্ফুটিত হয় মনের বিকাশ। বই হচ্ছে মানুষের সাথে তার চিন্তাশীলতার সাঁকো। যার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের জাগতিক বিবেকবোধ কে গড়ে তুলতে পারে অমলিনভাবে। একটা ভালো বই মানুষের জীবন ধারা কে বদলে দিতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, বই মানুষ কে তার জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সার্বিক ভূমিকা পালন করে। যে যত বেশি বই পড়বে সে তত বেশি জ্ঞানী।’’

যতই প্রযুক্তি এগিয়ে যাক, বইয়ের গন্ধ, কাগজের ছোঁয়া এবং লেখকের ভাবনায় হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ অমলিন। আজ ৯ আগস্ট—‘বুক লাভার্স ডে’—হতে পারে নতুন একটি বই হাতে নেওয়া, অথবা পুরোনো প্রিয় বইটি আবার পড়ার জন্য আদর্শ দিন। কারণ, বই আমাদের শুধু জ্ঞানই দেয় না; এটি আমাদের মানুষ করে তোলে।