স্বাস্থ্যখাত: এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রগতি কী?

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম © টিডিসি ফটো

একদিকে আন্দোলন, অন্যদিকে চিকিৎসা—এই দ্বৈত বাস্তবতায় আমরা মানুষের পাশে ছিলাম। অপরদিকে আহতদের চিকিৎসা, নার্স ও ডাক্তারদের পদোন্নতি, স্বাস্থ্যসেবায় প্রযুক্তি ব্যবহার, রোবটিক ফিজিওথেরাপি ও এআই, হৃদ্‌রোগ চিকিৎসায় নতুন উদ্যোগ, অভিন্ন মেডিকেল নীতিমালার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম গত এক বছরে স্বাস্থ্যখাতের এ সব তথ্য তুলে ধরেন। 

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, আন্দোলনে আহত ও নিহতদের সম্মান জানিয়ে তাদের একটি তথ্যভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করেছে সরকার। উপদেষ্টা জানান, ‘ফ্যাসিবাদীরা অনেক সময় আহতদের চিকিৎসা করতেও দেয়নি, তারপরও আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি।’ এ পর্যন্ত ৭৮ জন আহতকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪ জন উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।

আন্দোলনে আহত-নিহতদের সহায়তার জন্য গঠিত হয়েছে 'জুলাই ফাউন্ডেশন'। এর মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, ইউএসএ, ইউকে, চীন, নেপাল ও থাইল্যান্ডসহ দেশি-বিদেশি চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠান আহতদের চিকিৎসা সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার ৬২টি রোবটিক ফিজিওথেরাপি সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে ১৬টি সরঞ্জাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (এআই)। এই বিষয়ে ২৭ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং এই প্রযুক্তিকে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

আরও পড়ুন: দুর্নীতি দমন কমিশনে চাকরি, পদ ১০১

চিকিৎসা জনবল সংকট মোকাবিলায় ৩ হাজার চিকিৎসক বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি। নার্সদের প্রমোশনেও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার—৪৩ হাজার নার্সের মধ্যে ২০০ জন ইতিমধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন, আরও ২০০ জনের প্রক্রিয়া চলমান। নতুন করে ৩ হাজার ৫০০ নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মেধার ভিত্তিতে।

বিদেশমুখী চিকিৎসার প্রবণতা কমাতে দেশে কিডনি ও লিভার চিকিৎসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, ‘ডা. কামরুল একাই ১ হাজার ৮০০ কিডনি রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন।’ দেশে প্রথমবারের মতো লিভার প্রতিস্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে, যাতে দেশি ও বিদেশি চিকিৎসকের সমন্বয় ঘটছে।

ডায়ালাইসিস খরচ কমাতে সরকারি হাসপাতালে ৪০০ টাকায় এই সেবা চালু করা হয়েছে, যেখানে বেসরকারি পর্যায়ে একই সেবা নিতে খরচ পড়ে ৫ হাজার টাকা। সরকারি-বেসরকারি কোলাবোরেশনের মাধ্যমে এই ব্যবধান কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

হৃদ্‌রোগ চিকিৎসায় জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে এখন দুই শিফটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একই মডেল চালুর চেষ্টা চলছে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও। এতে করে রোগীদের সেবা দিগুন করা হলো।

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯টি হোস্টেল নির্মাণের কাজ চলছে, যা ১০ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করছে সরকার।

সাম্প্রতিক ‘মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি’ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘সিঙ্গাপুর ও চীন থেকে চিকিৎসক এনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও আমরা অনেককে বাঁচাতে পারিনি। সরকার অনুতপ্ত। তবে ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সে লক্ষ্যে নীতিগত পরিবর্তনের কাজ চলছে।’