অযত্নে হারিয়ে যাচ্ছে দেড়শ বছরের ফটিক হাওলাদারের জমিদার বাড়ি

প্রায় দেড় শতাব্দী পুরোনো একটি প্রাসাদোপম বাড়ি
প্রায় দেড় শতাব্দী পুরোনো একটি প্রাসাদোপম বাড়ি © টিডিসি ফটো

সবুজের সমারোহ যেখানে, গাছের শাখা-প্রশাখা বেয়ে লুকিয়ে আছে পৌরাণিক ঐতিহ্য। গল্পে গাঁথা এই বাড়িটি যেন জানিয়ে দিচ্ছে চন্দ্রদ্বীপের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও গৌরবের কথা। বরগুনার আমতলী উপজেলার প্রত্যন্ত গোপখালী গ্রামে মেঠোপথ ঘাট পেরিয়ে পৌঁছাতে হয় প্রায় দেড় শতাব্দী পুরোনো একটি প্রাসাদোপম বাড়িতে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে নিভৃতে দাঁড়িয়ে আছে এ স্থাপনাটি। নির্মাণ করেছিলেন ফটিক হাওলাদার, যার নামেই পরিচিত এ জমিদার বাড়ি।

ফটিক হাওলাদারের নাতি মুশফিকুর রহমান টুটু হাওলাদার জানান, বাড়িটি তিনভাগে বিভক্ত, আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি বড় চাচার অংশে, তিনি মধ্যখানে থাকতেন। শুকনো মৌসুমে আমরা মাঠে-ঘাটে খেলাধুলা করতাম, আর বর্ষার চার মাস ছাদ-বারান্দায় বৃষ্টিতে ভিজে বেড়াতাম।

স্থানীয়দের কাছে বাড়িটি ‘জমিদার বাড়ি’ নামে পরিচিত হলেও ফটিক হাওলাদার ছিলেন হাওলাদার পদবীর অধিকারী। তার পিতা ছরু হাওলাদার উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পটুয়াখালীর বাউফল থেকে এসে এ অঞ্চলে জঙ্গল কেটে বসতি গড়েন।

বাড়িটির নির্মাণকাজে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর। কলকাতা থেকে আসা নির্মাণ শ্রমিকেরা এটি তৈরি করেন। চুন, সুরকি, ইট, সেগুন, লোহাগোরা কাঠ এবং লোহার পাত দিয়ে নির্মিত এ ভবনে রয়েছে প্রায় ২০টি কক্ষ। খাজনা আদায়ের জন্য সামনে রয়েছে কাছারি ঘর বা বৈঠকখানা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভবনের তৃতীয় তলা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। টুটু আরো বলেন, ‘আমার বাপ-চাচারা  দুইবার মেরামত করলেও বর্তমানে ভবনটি ভগ্নদশাগ্রস্ত। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পর পরিবারটি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এখন আমরা নানা সমস্যার মধ্যে আছি। সরকারের সহযোগিতা পেলে বাড়িটি সংরক্ষণ করে বসবাস উপযোগী করা সম্ভব।’

বাড়িটিকে ঘিরে স্থানীয়দের মুখে মুখে ঘোরে নানারকম গল্প। কেউ বলেন, এখানে নাকি গুপ্তধনের অস্তিত্ব রয়েছে। কেউ আবার অলৌকিক ঘটনা দেখার দাবি করেন। কেউ দেখেছেন ছাদের ওপর বড় আকৃতির মানুষ টাকা ছড়াচ্ছে!

শতবর্ষী এ স্থাপনাটি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করলেও এর বর্তমান অবস্থা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের উচিত এটিকে প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া।’

জেলা প্রশাসক জনাব শফিউল আলম জানান, ‘আমরা দেশের এমন সব ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। এটি সংরক্ষণ করা গেলে বরগুনার পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হবে।’

জানা গেছে ফটিক হাওলাদারের এ বাড়ির মতো বরগুনায় আরও তিন-চারটি প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে। একটি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে তার স্থাপত্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। তাই সংশ্লিষ্টদের মতে, এখনই সময় ফটিক হাওলাদারের বাড়িটি রক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।