জনআকাঙ্ক্ষাকে কেন্দ্রে রেখে ঘোষণাপত্র জারিসহ ১২ দফা দাবি আরিফ সোহেলের
- ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২১:৩৭
ঘোষণা করতে যাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জুলাই ঘোষণাপত্রকে প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-সদস্য সচিব আরিফ সোহেল। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে প্রকাশিত জন আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে আপামর জনতাকে অংশীদার করার মাধ্যমে অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারিসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি দাবি জানান।
আরিফ সোহেলের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:
১) সংবিধান লঙ্ঘন করেই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, জনগণের বিজয়ের মধ্য দিয়ে সংবিধান বাতিল হয়ে গেছে। নতুন সংবিধানের জন্যে গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে
২) আওয়ামী লীগ সহ ১৪ দলীয় জোটের শরীক, আওয়ামী লীগকে পাতানো নির্বাচনে বৈধতা দেয়া দলগুলোকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা আওয়ামীলীগের ১৭ বছরের শাসনামলে ফ্যাসিবাদের পক্ষে বয়ান নির্মাণ করেছে তাদেরকে (সিপিবি....) ভ্রম সংশোধনমূলক বিবৃতি দিতে হবে নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে।
৩) ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ৪৭ পর্যন্ত উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম, ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪এর গণঅভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনআকাঙ্ক্ষাকে কেন্দ্রে রেখে আপামর জনতাকে অংশীদার করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। এই ঘোষণাপত্র গণপরিষদে নতুন সংবিধানের মূল নির্যাস হিসেবে বিবেচিত হবে।
৪) সকল শহীদ পরিবার ও আহত গাজীদের যোগ্য সম্মাননা, স্বীকৃতি দিতে হবে। সকলকে পুনর্বাসনের একটি মডেল প্রণয়ন করে পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। এতদিনের গাফিলতির সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫) জুলাই-আগস্টে জালিম রাষ্ট্রের ছোঁড়া প্রতিটি বুলেটের ক্ষেত্রে (একটি একটি করে হিসাব হবে, মোট খরচ হওয়া বুলেটের হিসাব আছে), যে ফায়ার করেছে, ফিল্ডে যে অফিসারেরা তত্ত্বাবধান করেছে, যে অফিসারেরা অপারেশন কো-অর্ডিনেট করেছে এবং যে রাজনৈতিক নির্দেশ দিয়েছে, এই চার স্তরের সকল অপরাধীকে চিহ্নিত করে বিচারপূর্বক অপরাধের মাত্রানুসারে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বিচার বিভাগকে ফ্যাসিবাদী দোসর মুক্ত করতে হবে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যে অপরাধীরা সেইফ এক্সিট বা শেল্টার নিয়েছে তাদের এক্সিট/শেল্টার দেওয়া ব্যক্তিবর্গ সে যেই হোক না কেনো তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
আরও পড়ুন: জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন বিএনপির ৫ সদস্য
৬) সেনাবাহিনী, পুলিশ সহ বল প্রয়োগকারী প্রতিটি সংস্থায় যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন, সরাসরি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন বা সপক্ষে কাজ করেছেন তাদের চিহ্নিত করে পুরস্কৃত করতে হবে এবং নেতৃত্বে সামনে নিয়ে আসতে হবে। ফ্যাসিবাদী সরকারকে গুম, খুন, পাতানো নির্বাচনে সহযোগিতা করা প্রত্যেককে, যত।হাই র্যাংকই হোক না কেনো, চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৭) সচিবালয় সহ সিভিল সার্ভিসের প্রতিটি স্তরে ফ্যাসিবাদী সরকারের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের শরীক সব আমলাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। দ্রুত বিচার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র-জনতার পক্ষে যারা ছিলেন তাদের সার্ভিসের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে।
৮) আওয়ামীলীগ ও তার সরাসরি প্রমাণিত দোসরদের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা কাজে লাগিয়ে দেশের বেকার তরুণদের জন্যে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯) সকল কারখানায় শক্তিশালী শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ইমিডিয়েটলি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষকদের লোকসান থেকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা প্রদান করতে হবে।
শ্রম শোষক ও মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়িয়াদের উৎখাত করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ঘটা সকল শ্রমিক নিপীড়ন, কৃষক আত্মহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে নিপীড়কদের বিচার করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত মেহেনতি মানুষদের পুনর্বাসন করতে হবে।
১০) অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অন্যায্য হামলার স্বীকার সকল কমিউনিটিকে পুনর্বাসিত করতে হবে, অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। নানা ধর্ম, জাতিস্বত্ত্বার মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষায় প্রতিনিধিত্বমূলক বিশেষ প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে।
১১) প্রতিটি সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত জনতার সাথে উন্মুক্ত মতবিনিময়ের আয়োজন রাখতে হবে। আপামর জনতাকে পক্ষে বিপক্ষে আলাপ-আলোচনায় এংগেজ করতে হবে। কোনো এসি রুমে শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে মতবিনিময় চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে না।
জাতি, ধর্ম, পেশাকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে আপামর জনতার মতামত আমলে নিয়ে জুলাই সনদ করতে হবে। এই সনদ গণপরিষদে রাষ্ট্রের কাঠামোগত আলাপে উত্থাপিত হবে এবং নতুন সংবিধানে গণপরিষদের অনুমোদনপূর্বক স্থান পাবে। আরো বেশ কিছু ব্যাপারে সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে, যেমন: শিক্ষা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (জনমতের ভিত্তিতে আরো বাড়তে পারে)।
১২। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে জোট নিরপেক্ষ রাখতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার নিপীড়িত মানুষের জন্যে সীমান্ত খোলা রাখতে হবে। ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সক্রিয়ভাবে সামরিক ও বেসামরিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
আজ গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে কর্তব্য কাজ স্মরণ করলাম। আরো অনেক কর্তব্য আছে কিন্তু এগুলো ইমিডিয়েট। যত দূরবর্তীই মনে হোক, এইটাই কর্তব্য। হাসিনাকে ফালানোও অনেক অসম্ভব মনে হয়েছিলো একসময়। ইনশাআল্লাহ, আমরা কামিয়াব হবো, হতেই হবে এটাই আমাদের শপথ!
এর আগে, সোমবার দিবাগত রাতে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরিফ সোহেল বলেন, আপনারা প্রহসনের ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করুন। জনগণের পক্ষ থেকে, সকল শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, বর্ণ, জাতিসহ জনগণকে সাথে নিয়ে নতুন ঘোষণাপত্র তৈয়ারীর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিন। যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে ইতিপূর্বে ব্যর্থ হয়েছেন সেই ভ্রম সংশোধন করে, লুটেরা টাকাওয়ালা, দুর্নীতিবাজ আমলা আর উচ্চাভিলাষী বাটপারদের বিপক্ষে অবস্থান নিন, বাংলাদেশের আপামর বিপ্লবী ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক জনতার পক্ষে থাকুন। লুটেরা, কায়েমি ব্যবস্থার পক্ষে থেকে বিপ্লবী নেতৃত্বের মধ্য থেকে নিজেদের নাম খারিজ করবেন না। ইনশাআল্লাহ, বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত ঘোষণাপত্র তৈয়ার হবে। শহিদ ও গাজীদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে!
প্রসঙ্গত, আজ বিকেলে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এ ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।