ঢাবির পদার্থবিজ্ঞানের প্রাক্তন অধ্যাপক পরমাণু বিজ্ঞানী এম শমসের আলী আর নেই
- ০৩ আগস্ট ২০২৫, ২২:১৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তিনি আজ রবিবার (৩ আগস্ট) ভোররাত ৩টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। ঢাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম তালুকদার স্বাক্ষরিত এক শোক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শমশের আলীর বড় ছেলে জেহান আলী জানান, বাদ জোহর ধানমণ্ডির ৭ নম্বর রোডের বায়তুল আমান মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবং এরপর আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
বাংলাদেশের খ্যাতনামা পদার্থবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এম. শমশের আলী ১৯৩৭ সালের ২১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনের শুরুতে ১৯৫৪ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৬ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন।
একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৫৯ সালে অনার্স এবং ১৯৬০ সালে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমান। সেখানে ১৯৬১ সালে প্রথম পিএইচডি এবং ১৯৬৫ সালে থিওরেটিক্যাল নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে দ্বিতীয়বারের মতো পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
পেশাগত জীবনের সূচনা ঘটে ১৯৬১ সালে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগদানের মাধ্যমে। পিএইচডি সম্পন্ন করে দেশে ফিরে ১৯৬৫ সালে তিনি ঢাকায় আণবিক শক্তি কেন্দ্রে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে যোগ দেন। কর্মদক্ষতা ও নেতৃত্বের গুণে ১৯৭০ সালে তিনি কমিশনের পরিচালক পদে নিয়োগ পান এবং ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করেন।
একজন বিজ্ঞানী হিসেবে তার অবদান স্বীকৃতি পায় একাধিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অনারারি প্রফেসর অব ফিজিক্স হিসেবে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। পরে ১৯৮২ সালে তিনি পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন।
শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন অধ্যাপক শমশের আলী। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বিজ্ঞানচর্চার অগ্রপথিক এই ব্যক্তিত্ব ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ, ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ তিনি বাউবির প্রফেসর ইমেরিটাস পদে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেন।