করোনা পরবর্তী পেট ও মস্তিষ্কে সমস্যা বেড়েছে ৪৭%, যা বলছে গবেষণায়

প্রতীকি ছবি
প্রতীকি ছবি © সংগৃহীত

কোভিড-১৯ মহামারির পর বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি ঘটেছে পেট ও মস্তিষ্ক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত রোগে, যেগুলোকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় ‘গাট-ব্রেইন ইন্টারঅ্যাকশনের বিকার’। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) ও ফাংশনাল ডিসপেপসিয়া—এই দুটি রোগই হজমতন্ত্রের কার্যকারিতা সংক্রান্ত সমস্যা, যেগুলোকে ফাংশনাল গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডার বলা হয়। এগুলোতে সাধারণত হজমতন্ত্রে কোনও গঠনগত সমস্যা বা প্রদাহ না থাকলেও লক্ষণগুলো বেশ কষ্টদায়ক হতে পারে। (খবর মেডস্কেপ জার্নাল অফ মেডিসিন)

সম্প্রতি বিশ্বে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, পেট ব্যথা, গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যায় ভোগে। কোভিড-পূর্ব যেখানে ৩৮% প্রাপ্তবয়স্ক এই ধরনের সমস্যায় ভুগছিলেন, সেখানে কভিড পরবর্তী সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ শতাংশে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৃদ্ধি কেবল কোভিড ভাইরাসের সরাসরি প্রভাব নয়—এর পেছনে রয়েছে মহামারিকালে মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা। 

আরও পড়ুন: দুশ্চিন্তা: নীরব মানসিক অসুস্থতা, সচেতন হোন এখনই

সমীক্ষার প্রধান গবেষক ডা. ইমরান আজিজ বলেন, ‘এই রোগগুলোকে এখন ‘লং কোভিড’-এর অংশ হিসেবে দেখা দরকার। কোভিড-পরবর্তী পেটের সমস্যা অনেক বেশি জটিল এবং চিকিৎসার প্রয়োজনও বেশি।”

তিনি জানান, কোভিডের সময় যারা পেট ব্যথা বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, কিংবা যাদের একাধিকবার সংক্রমণ হয়েছে, তাদের মধ্যেই এসব সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, ডিজিবিআই রোগের হার বেড়েছে: ৩৮% → ৪৭%, ফাংশনাল ডিসপেপসিয়া বেড়েছে: ৮% → ১২%, আইবিএস রোগী বেড়েছে: ৫% → ৬%। এই প্রবণতা দেখা গেছে সব বয়স ও লিঙ্গের মানুষের মধ্যেই।

গবেষণায় আরও বলা হয়, এই রোগের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য যেমন উদ্বেগ ও বিষণ্নতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অনেক সময় আগে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, পরে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা শুরু হয়—আবার উল্টো ঘটনাও ঘটে।

ডা. আজিজ বলেন, এখনো পর্যন্ত করোনা পরবর্তী  ডিসপেপসিয়ার জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। তাই প্রচলিত চিকিৎসাই সবচেয়ে ভালো পন্থা। পাশাপাশি, রোগীকে শুধু গ্যাস্ট্রিক নয়, মানসিক দিক দিয়েও সমর্থন দিতে হবে। অনেক লং কোভিড ক্লিনিক এখন মানসিক ও শারীরিক—দুই দিকেই চিকিৎসা দিচ্ছে, যা সবচেয়ে কার্যকর বলে প্রমাণিত হচ্ছে।