ভুয়া মামলা দিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে

কুবি শিক্ষার্থী আরাফ ভূঁইয়া
কুবি শিক্ষার্থী আরাফ ভূঁইয়া © টিডিসি সম্পাদিত

সমন্বয়ক পরিচয়ে মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলা কমিটির সাবেক মুখ্য সংগঠক আরাফ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে ভুক্তভোগীরা ১ আগস্ট কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন।

অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় এবং তাদের অর্থায়নে মামলার ভয় দেখিয়ে আরাফ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে দায়ের করা মামলায় বিরোধী মতের মানুষদের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে এবং মামলা থেকে অব্যাহতির শর্তে আরাফ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামীলীগ নেত্রী ডা. তাহসীন বাহার সূচনা, আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ ও কৃষকলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী সহ মোট ১৭৯ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২০০-৩৫০ জনের নামে কোতয়ালী মডেল থানায় বাদী একটি মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগ করা হয় এই মামলায় কিছু সাধারণ মানুষকে আসামী করা হয়, যারা ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন।

মামলার এজহারে মামলার ঘটনার স্থান হিসেবে টমছমব্রীজ ও সালাহউদ্দিন মোড় উল্লেখ করা হয় এবং মামলার সময় হিসেবে এজাহারে ৪ আগস্ট শনিবার উল্লেখ করা হয় কিন্তু ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ছিল রবিবার। এছাড়াও মামলার অভিযোগে ৪ আগস্ট শুক্রবার উল্লেখ করা হয়। 

আরও পড়ুন: ২৬ পয়েন্টে থাকছে হাসিনার গুম-খুন-অপশাসন, রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাবে অভ্যুত্থান

মামলার অভিযোগে বলা হয়, উপরোক্ত আসামীগণ  স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচির ডাক দিলে কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এবং সাধারণ জনতা বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করে। এসময় আসামীরা সাবেক মেয়রের নির্দেশে বে-আইনীভাবে  রিভালভার, পিস্তল, ককটেল, রামদা, লাঠিসহ দেশীয় এবং বিদেশী অস্ত্রে সুসজ্জিত হইয়া হত্যা, দাঙ্গা, ত্রাস ও জনমনে আতংক ছড়ায়।  ৪ আগস্ট শুক্রবার টমছমব্রিজ মসজিদের পূর্বপাশেসহ মসজিদের আশপাশে ছাত্র-জনতা মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণসহ গুলি ছুড়ে।  এরপর সালাউদ্দিন মোড়ে  ছাত্র-জনতার মিছিলকে লক্ষ করে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি ছুড়ে। এসময় অনেক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়।  এমনকি আহত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে যাতায়াত পথে ও ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায়। 

জানা যায়া, ৪ আগস্ট টমছমব্রীজ ও সালাহউদ্দিন মোড়ে কোনো আন্দোলন হয়নি। এইদিন আন্দোলনের স্থান নির্ধারণ করা হয় কোটবাড়ি বিশ্বরোড। পরে এখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেওয়ায় আন্দোলনের স্থান আলেখারচর বিশ্বরোড নির্ধারণ করা হয়। 

এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম সাক্ষী কুবির সিএসই বিভাগের মো: ইকবাল বলেন, ৪ তারিখ টমছমব্রীজ কোনো আন্দোলন হয়নি। আমরা কোটবাড়ি বিশ্বরোডে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা হামলার শিকার হই। মামলার ঘটনায় কি উল্লেখ ছিল আমি সেটা জানিনা। আমি একজন ভুক্তভোগী হিসেবে সাক্ষী দিয়েছি। গতকাল ভুক্তভোগী পরিবার সংবাদ সম্মেলন করার পরে আমি বাদীকে অবহিত করে বলেছি, এটার দায় আমরা নিব না। 

আরেক সাক্ষী ইমতেহাদ উল হক বলেন, আমাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারধর করেছে রেসকোর্স। টমছমব্রীজ কি হয়েছে আমি জানিনা। সাক্ষী হিসেবে কিভাবে আমার নাম আসলো সেটাও আমি জানিনা। আমি স্বাক্ষর করিনি।

আরও পড়ুন: ’৪৭, ’৭১ ও ২০২৪-এর ধারাবাহিকতা থাকতে হবে জুলাই সনদে

মামলার আসামী আল আমিনের স্ত্রী সীমা আক্তার মানববন্ধনে বলেন, আমার স্বামী নয় মাস ধরে কারাগারে মিথ্যা মামলায় সাজা পাচ্ছে। সে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল না। আমি আরাফের কাছে গিয়েছি। যাওয়ার পর উনি বলেন তিন লাখ টাকা দিলে ব্যাপারটা দেখবে। আমার স্বামীর জামিন হচ্ছে না। 

আরেক আসামী রিয়াজ খান বলেন, আমরা ছাত্র আন্দোলনে উৎসাহ দিয়েছি। টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করেছি। আমাদের এলাকার আওয়ামী লীগের দোসররা আরাফকে টাকা দিয়ে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করিয়েছে। মামলা দেওয়ার পর ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর আমি গ্রেফতার হই। গ্রেফতারের পর আরাফ ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে সে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। দুই লাখ টাকা না দেওয়ায় আমি ৩ মাস ৪ দিন জেল খেটেছি। যারা এমন জুলাই বিক্রি করে খাচ্ছে আমি সরকারের কাছে তাদের বিচার চাই। 

মাছ ব্যবসায়ী শাহীন মিয়া বলেন, আমি একজন মাছ ব্যবসায়ী আমি কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত না। আমার ছেলে কুমিল্লা মর্ডান স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী। আমি সব সময় তাকে আন্দোলনে যেতে উৎসাহ দিতাম। আমি জুলাই আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। কিন্তু দু:খের বিষয় হচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের পর আরাফ ভূঁইয়া বাদী হয়ে  আওয়ামী লীগের দোসরদের থেকে টাকা খেয়ে মিথ্যা মামলা করে। যার কারণে নয় মাস ধরে আমি ফেরারি আসামী বাড়ি ঘরে থাকতে পারিনা, ব্যবসা করতে পারি না। আমি সরকারের কাছে যারা এসব মিথ্যা মামলা করে চাঁদা দাবি করতেছে তাদের বিচার চাই। 

অভিযোগের বিষয়ে আরাফ ভূঁইয়া বলেন, আমরা মামলাটা ৪ আগস্টের হামলাকে কেন্দ্র করে করেছি। ছবি ও ভিডিও ফুটেজ চেক করেই আমরা আসামীদের নাম দিয়েছি। মামলা করার আগে ও পরে সাক্ষীদের সাথে কথা হয়েছে। আর গতকাল যারা মানববন্ধন করেছে আমি তাদেরকে চিনি না। ওরা যে অভিযোগ  তুলছে আমি শুধু এতটুকু বলতে চাই ওই অভিযোগের ন্যূনতম যদি একটা প্রমাণও দেখাতে পারে আইন অনুযায়ী যা সিদ্ধান্ত হবে তা মেনে নেব।

কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মইনুল ইসলাম বলেন, কারা মানববন্ধন করেছে আমরা জানিনা। যদি আমাদেরকে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়, আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।