জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
নির্মাণাধীন ছাদ ধসে আহত ১১ শ্রমিক, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর অভিযোগ শিক্ষার্থীদের
- নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- ০২ আগস্ট ২০২৫, ০০:৪৬
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে অন্তত ১১ শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ঘটনায় নির্মাণসামগ্রীর মান নিয়ে তীব্র প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ঢালাই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের রড ও ঢালাই উপকরণ। অনেক জায়গায় জোড়াতালি দেওয়া রড, লোহার খুঁটির পরিবর্তে বাঁশের খুঁটি এবং পাটের সুতো দিয়ে বাঁধার মতো ঝুঁকিপূর্ণ উপায় অবলম্বন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ‘বিদ্রোহী’ ছাত্রাবাসের পাশে একটি ১০ তলা ছাত্রাবাস নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণাধীন ছাত্রাবাসের নিচতলায় একটি বারান্দার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। আজ সকাল থেকে ঢালাইয়ের কাজ চলতে থাকে। কিন্তু বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিকট শব্দে ধসে পড়ে পুরো ছাদ। এ সময় সেখানে কাজ করা অন্তত ১১ শ্রমিক আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে একজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) এস এম জিয়াউল বারী বলেন, আহত অবস্থায় ১১ শ্রমিককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তাদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আজ দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। ছাদ ঢালাই দেওয়ার জন্য খুঁটিগুলো ছিল দুর্বল। অনেক স্থানে লোহার পাইপের পরিবর্তে খুঁটি হিসেবে বাঁশ ও পাটের দড়ি ব্যবহার করা হয়। দুর্বল কাঠামোর কারণেই ছাদ ধসে যেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবুর রহমান বলেন, ১০ তলা ভবনের নিচে বারান্দার অংশের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। নির্মাণকাজ করছিল সিএসআই নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ছাদ ধসে কয়েকজন শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
নির্মানাধীন ভবনের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহাত হোসেন দিদার বলেন, আমরা সবকিছু চেক করেই ছাদ ঢালাই শুরু করি। মাঝখানে বৃষ্টি হওয়ায় নিচের খুটি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের কোন নিরাপত্তা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের নির্দেশনা মেনে চলার জন্যে নির্দেশ দিয়ে থাকি। প্রকৌশল দপ্তরের গাফিলতির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন এখানে আমাদের কোন গাফিলতি নয় এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটায় প্রশ্ন উঠেছে কাজের মানের বিষয়ে। প্রতি ভবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাইট ইঞ্জিনিয়ার থাকলেও এসব বিষয় কেন ঠিকমতো তদারকি করা হয়নি জানতে প্রকৌশল দপ্তরের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কী কারণে ধসে পড়ল, কারও গাফিলতি আছে কি না, তা তদন্তে দেখা হবে। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।