সংসদীয় আসন কমানোর প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ বাগেরহাটবাসী
- ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪৮
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাগেরহাট জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কারিগরি কমিটি। বুধবার (৩০ জুলাই) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাবের কথা জানান কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। কমিশনের দাবি, সংবিধানের ১১৯-১২৪ ধারা অনুযায়ী ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে এ প্রস্তাব এসেছে। বাগেরহাটে ভোটার সংখ্যা কম হওয়ায় একীভূত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন সীমানা অনুযায়ী বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, ফকিরহাট, মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (সদর, কচুয়া, রামপাল) এবং বাগেরহাট-৩ (মোংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা) হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে এ খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্টজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বাগেরহাটের জনসংখ্যা ১৬ লাখের বেশি এবং আয়তন প্রায় ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। বিশ্লেষকরা বলছেন, জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক দিক থেকে জেলাটি এখনো চারটি আসন রাখার উপযুক্ত। ১৯৮৪ সালে জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন ছিল।
ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট এমনিতেই অবহেলিত। এখন যদি একটি আসন কমে, তাহলে উন্নয়ন আরও থমকে যাবে।
পিসি কলেজের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান জায়েদ জানান, চারটি আসন থাকা সত্ত্বেও আমাদের এলাকায় উন্নয়ন হয়নি। একটি আসন কমলে বাগেরহাট আরও পিছিয়ে পড়বে।
ছাত্রনেতা শেখ আল মামুন তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, আমরা চারটি আসনও কম মনে করি। সেখানে এখন তিনটি করা হলে বাগেরহাটবাসীর কণ্ঠ সংসদে পৌঁছাবে না। আমরা এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা শেখ বাদশা বলেন, বাগেরহাটে দীর্ঘদিন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ভাই হেলাল উদ্দিন, ভাইপো শেখ তন্ময় ও আওয়ামী লীগের নেতারা চুষে খেয়েছে। এখনো উন্নয়নের ছোঁয়ার বদলে জেলাবাসী পেয়েছে অবহেলা। এই জেলা নয়টি উপজেলা, তিনটি পৌরসভা, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর ও বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে ধারণ করে। এখানে আসন সংখ্যা বাড়ানোর কথা, সেখানে কমানো মানেই জেলাকে আরও অবহেলার কাতারে ঠেলে দেওয়া। আমরা চাই, বাগেরহাটের সংসদীয় আসন সংখ্যা যেন কোনোভাবেই কমানো না হয়।
জেলা বিএনপির সদস্য খান মনিরুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ, মোংলা বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থাকা সত্ত্বেও বাগেরহাটের প্রতি বরাবরই কেন্দ্রীয় সরকারের উপেক্ষা রয়েছে। এবার আসন কমানোর মাধ্যমে আরও একধাপ অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম অভিযোগ করেন, নির্বাচনের খেলা বানচাল করার জন্যই আসন কমানো হচ্ছে। এটি বাগেরহাটবাসীর প্রতি চরম অবমাননা।
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, সুন্দরবনের মতো আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের জেলা থেকে একটি আসন কমানো ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছি।
বর্তমানে বাগেরহাটে সংসদীয় আসন বিন্যাস হলো: বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, ফকিরহাট, মোল্লাহাট),বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া),বাগেরহাট-৩(মোংলা ও রামপাল),বাগেরহাট-৪(মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা)নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী এই চারটি আসনকে তিনটিতে রূপান্তরের পরিকল্পনায় বাগেরহাটের মানুষ ন্যায্য অধিকার ও উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় ক্ষোভে ফুঁসছে।