সাজিদের মৃত্যু কোনোভাবেই ধামাচাপা দেওয়া হবে না: ইবি ভিসি
- ২৯ জুলাই ২০২৫, ২১:১৪
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে উদ্ধারকৃত আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হবে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের নিচে শিক্ষার্থীদের সাথে সাজিদের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির অগ্রগতি বিষয়ক এক ব্রিফিংয়ে এই নিশ্চয়তা দেন তিনি।
ইবি উপাচার্য বলেন, ‘সাজিদের মৃত্যুতে তোমাদের মত আমি সমভাবে ব্যথিত। তোমাদের মতো আমিও জাস্টিস চাই। প্রশাসন সাজিদের মৃত্যুকে কোনোভাবেই ধামাচাপা দিতে চায় না, এই নিশ্চয়তা তোমাদের দিচ্ছি। এ কমিটি যদি মৃত্যু রহস্য বের করতে না পারে তাহলে সিআইডি দ্বারা তদন্ত করানো হবে, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করানো হবে। প্রয়োজনে আমরা পিবিআইকে দায়িত্ব দেব। আমি সামান্যভাবেও এটাকে ছেড়ে দেব না, আমরা এর শেষ দেখতে চাই। ডিআইজি সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে, তাকেও অতিদ্রুত ভিসেরা রিপোর্ট দিতে বলেছি। ভিসেরা রিপোর্ট আসার পরেই তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে পারবে।’
সাজিদের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়কে অনিরাপদ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি বাড়ানোর জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা গ্রহণ করা হচ্ছে। তোমাদের উত্থাপিত দাবি অনুযায়ীই আমরা কাজ করছি। আমি গতকাল দেশে এসেই প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টরিয়াল বডি, তদন্ত কমিটি সবাইকে ডেকেছি। তবে যে কোনো বিষয় তদন্তের ক্ষেত্রে সূক্ষ্মভাবে তা করতে হয়। কোন মারামারির ঘটনায় চাক্ষুষ স্বাক্ষী থাকে, তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদন দিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু এখানে সম্ভাব্য সবাইকে ডাকতে হচ্ছে। সাজিদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তোমাদের প্রথম দাবি ই যথেষ্ট, এ ব্যাপারে বিশ্বাস রাখো।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল কুরআন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝি, জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান খান, ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন ছাড়াও ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও অন্যান্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ‘তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলেছি, অগ্রগতির ব্যাপারে সাংবাদিকদের অবহিত করেছি। সাজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ এবং অন্যান্য বিষয়ে আমাদের কানেক্ট করতে হয়েছে। সাজিদের সুরতহাল রিপোর্ট, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং ভিসেরা রিপোর্ট এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার ভিসেরা রিপোর্টের ব্যাপারে আমরা তাগাদা দিয়েছি, আজকে বিকালে অথবা আগামীকাল আমরা সেটি হাতে পাব। আজকে এবং আগামীকাল সারাদিন সারারাতের মধ্যে আমরা একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব বলে আশাবাদী।’
এর আগে, সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবিতে সকাল থেকে আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত রিপোর্ট দিতে না পারলে প্রশাসনকে গদি ছেড়ে দেওয়ার আহবান জানান তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘পারলে আজই রিপোর্ট দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’; ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘প্রশাসনের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশান’; ‘প্রশাসনের টালবাহানা, চলবে না চলবে না’; ‘আমার ভাই কবরে, প্রশাসন কী করে’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’; ‘উই উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’; ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’; ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সাজিদ হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।