ফেসবুকে ভাইরাল নিহতের ‘মর্মস্পর্শী’ একটি ভুয়া স্ট্যাটাস ও নেপথ্যের গল্প

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে অপপ্রচার
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে অপপ্রচার © টিডিসি সম্পাদিত

২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ চলাকালে বিধ্বস্ত হয়। ওই ঘটনায় স্কুলটির শিক্ষার্থী হতাহতের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পরে হেলিকপ্টারে করে গুরুতর আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেই সময় ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক উৎসুক মানুষ ভিড় করেন। অনেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে উদ্ধার কাজেও অংশ নেন। তবে মানুষের এই ভিড় থেকেই একপর্যায়ে মুখে মুখে গুজব ছড়িয়ে পড়ে হেলিকপ্টারে করে মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। এ অপপ্রচারের ফলে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দেয়।

ঘটনার দিন এবং পরদিনও অনেকেই ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিযোগ ওঠে, গণমাধ্যমে আহত-নিহতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। একই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিকর ভিডিও-ছবি, যা সাধারণ মানুষের সন্দেহ ও উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের দায়িত্ব ও তথ্য প্রকাশের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।

ঘটনাটি কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় একটি হৃদয়বিদারক স্ট্যাটাস। ভাইরাল হওয়া ওই স্ট্যাটাসে আমিনুল মুনতাসির নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন, তার চাচাতো ভাই মিরসাদ ইসলাম আযান ওই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। সেই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমার ভাই মিরসাদের লাশ শনাক্ত হইছে, হ্যাঁ, লাশ শনাক্ত হইছে... তবে তাতে কোনো স্বস্তি নাই, কোনো আনন্দ নাই। কারণ লাশ বলতে একটা পোড়া ছেঁড়া শার্ট, যার পেছনে সামান্য মাংস আর চামড়া লেগে আছে।’

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ট্যাটাসটির একটি স্ক্রিনশট

 

[স্ট্যাটাসটির একটি অংশ কোনো কোনো পাঠকের অস্বস্তির কারণ হতে পারে]

‘‘আমার ভাই মিরসাদের লাশ শনাক্ত হইছে , হ্যাঁ লাশ শনাক্ত হইছে। শুনে খুশি লাগতেছে না? আমিও খুশি হইছিলাম! কিন্তু....
বডি পাইছে মানে দেহ আরকি, মানে আমার ভাই আরকি;

কেমন বডি জানেন? এমন একটা বডি যেখানে মাথা , পা , হাত কিচ্ছু নাই। তো কি আছে? শার্ট পাইছে , ফুল প্যান্ট এর ছেড়া ছেড়া অংশ পাইছে। শার্টের পিছনের অংশে পিঠের চামড়া লেগে আছে। ওর শার্ট যে এইটা কিভাবে বুঝছে? এইটা আম্মুকে শিখায় দেওয়ার পর আম্মু জিজ্ঞাস করছে। কলের ওইপাশ থেকে উত্তরগুলো ছিল এইরকম : 

এক আলাদা রুমে নাকি সবার ড্রেসগুলো খুব আলাদা আলাদা করে সিকিউর করে রাখছে, আলাদা আলাদা করে অনেকের পায়ের আঙুল, হাতের আঙ্গুল, কান— এইরকম অংশও রাখা আছে ক্লাসভিত্তিক। মানে ক্লাসগুলো ঘেঁটে যা যা পাইছে, এগুলো সব একত্রে রাখা হইছে এমন কিছু বুঝাইছে। আমার এগুলো স্বপ্নের কথার মতো লাগতেছিল, বিশ্বাস হচ্ছিল না, মিরসাদের চাচি বলতেছিল আর আমরা শুনতেছিলাম, মনে হচ্ছিল কোনো গল্প, কোনো থ্রিলার মুভির ট্রেইলার! ক্লাসে ক্লাসে ছড়িয়ে ছিল হাত-পা। এই কথা বানানো মুভির স্প্রিপ্ট না কোনো, মাইলস্টোনের শিক্ষকদের জিজ্ঞাস করিয়েন, বিমান বিস্ফোরণের সাথে সাথে মাসুম সেই বাচ্চাগুলোর দেহ টুকরা টুকরা হয়ে গেছে, যারা একটু দূরের রুমে ছিল তারা আগুনে পুড়ে ছাই! এইটা যেনো এক কেজিএফ মুভির শুটিং!

মিরসাদের মামা আর নানা আজকে গেল খোঁজ নিতে, তারা আজকে বিকালে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা পৌঁছাইছে মাত্র। তারা আজকে লাশ শনাক্ত করতে গেছে কারণ স্কুল কমিউনিটি থেকে কল আসছে , তাঁরা বলছে অন্তত একবার দেখে যান কোন অংশ পান কিনা! আমরা সবাই তো লাশ এর ছিটেফোঁটাও পাব না ধরেই নিছিলাম, বুঝাই ফেলছিলাম মনকে সবাই যে গায়েবানা জানাজা পড়া লাগবে, দেহ ছাড়া কবর হবে আমার ভাইয়ের!

তারপর গেল লাশ শনাক্ত করতে, দেয়ালে টাঙানো পেইজ দেখে এক্সক্ট্রা রুমটা নাকি প্রথমে খুঁজে বের করতে হইছে। অনেক হাসপাতালে নাকি রাখা হইছে বডি, চিকিৎসা+লাশ একসাথে কয়েকটা হাসপাতালে রাখা হইছে। ওরা গেছিলো ন্যাশনাল বার্ন ইনস্টিটিউট আমার যতটুকু মনে আছে, আরও কি কি হাসপাতালের নাম বলছিল এতো কিছু আমার মনে নাই। ওইখানে নাকি ডিএনএ ম্যাচ করে, ক্লু দেখে দেখে সব মিলে গেলে দেহ হস্তান্তর করা হচ্ছিল। হাসপাতালে গিয়ে অন্য গার্ডিয়ান থেকে জানতে পারে যে, এখন সর্বমোট ৬টা দেহ শনাক্ত সম্পন্ন হইছে!

সব ক্লাসভিত্তিক বক্স থেকে ক্লাস-১ (সেকশন নাকি কয়েকটা আছে— তো এগুলো হয়তো সেকশন আকারে সাজানো ছিল সব, উনি বয়স্ক মানুষ এতো বুঝাই বলতে পারে নাই মোবাইলে)-এর বক্সে আঙুল, কান যা যা আছে অর্থাৎ দেহের যা যা অংশ ক্লাসরুমে পাইছে আরকি সবগুলো থেকে আলাদা আলাদা স্যাম্পল সংগ্রহ করছে; কিন্তু একটা স্যাম্পলও মিলেনি আন্টির ডিএনএ-এর সাথে, মাইশার ডিএনএ এর সাথে। যারা কর্মরত ছিল তাদের ব্যবহারও নাকি তেমন ভালো ছিল না, এই বিষয়ে লিখতেছিনা আমি।

(উল্লেখিত যে : আন্টি থেকে ডিএনএ স্যাম্পল উনি যখন আইসিইউতে জীবিত ছিলেন তখন নিয়ে রাখা হইছিলো , নিয়ে রাখা না হলে আন্টির ইন্তেকালের কারণে ছেলের শার্টটাও আর নিতে পারতাম না আমরা!!)
তারপর দেখলো সব সংগৃহীত শার্ট এর টুকরো, অর্ধ ছেড়া শার্ট, অর্ধ পোড়া শার্ট ঘেটে, একটা শার্টে ঝাপসা লিখা আছে: মিরসাদ ইসলাম আযান! 

আযান নামটা আমি দিছিলাম, এইটা রেখে দিছিল আংকেল আন্টি। কি সুন্দর নাম না? যেমন নাম তেমনই রহমতের নূরের মতো সুন্দর ছিল আমার  ভাইটা, একদম গুলুমুলু!

ওই শার্টের পিছনের পার্টে পিঠের অংশে লেগে আছে মাংস আর চামড়া। আন্টি আর ওর বোন মাইশা এর সাথে ডিএনএ টেস্ট করছে শার্টে লেগে থাকা মাংস, চামড়ার অংশ থেকে। আল্লাহ্ এর রহমতে এই স্যাম্পল মিলে গেছে, না মিললে এই শার্ট নিতে পারতো না ফ্যামিলি। এই শার্টে লেগে থাকা চামড়ার অংশ ছাড়া আমার ছোট ভাইয়ের দেহ হিসেবে আর কিচ্ছু নাই, আর কিচ্ছু নাই। এইটাই আমার ছোট্ট ভাইয়ের শরীর। মানে বলতে গেলে ১০০% শরীর উধাও, জাস্ট ২/৩ গ্রাম চামড়া আর অল্প স্বল্প মাংস মিশ্রিত একটা শার্টকে দেহ হিসেবে কল্পনা করে নিতে হবে!

এই শার্ট দিয়েই জানাজা হবে আমার ভাইয়ের, এইটাই দাফন হবে কবরে! ওহ্ আল্লাহ্ আমি তোমার পাপি বান্দাহ , আমার ছোট্ট ভাইটা তো নিষ্পাপ ছিল। আমি তোমার কাছে জানতে চাই কেনো এমন মৃত্যু আমার ছোট ভাইরে দিলা?

স্ট্যাটাসের কমেন্টে তিনি আরও লিখেন, আমার ছোট ভাইটা কি দোষ করছিল? আল্লাহ্ কেনো এই মাসুম বাচ্চাটা এইভাবে আগুনে জ্বালালো? এইরকম আরো কত ছোট ছোট ভাই বোন জ্বলে গেছে আমার! ওহ্ আল্লাহ্ আমার ছোট ভাইটা আমার কলিজা ছিল রে। কেমনে ভুলতাম?’’

আমিনুলের ওই স্ট্যাটাসটিতে ইতোমধ্যেই ১১ হাজার রিয়্যাকশন হয়েছে। শেয়ার হয়েছে ৬ হাজার বার। যদিও ঘটনার সতত্য নিশ্চিতে অনেকের প্রশ্নের মুখে বর্তমানে স্ট্যাটাসটির কমেন্ট বক্স অফ করে রেখেছেন তিনি।

এই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হলে অনুসন্ধানে নামে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। পোস্টের সত্যতা নিশ্চিত করতে আমিনুল মুনতাসিসের সঙ্গে তার মুঠোফোনে অন্তত ১০০ বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। শুধু তাই নয়, মোবাইলে পাঠানো ক্ষুদে বার্তার উত্তরও দেননি তিনি; যদিও দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস নিশ্চিত হয়েছে, তিনি ক্ষুদেবার্তাটি দেখেছেন (হোয়াটসঅ্যাপ ব্লু টিকের মাধ্যমে)। পরে তার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। তার বন্ধু আশরাফুল ইসলাম (ছদ্ম নাম) জানান, আমরাও প্রথমে বিশ্বাস করেছিলাম পোস্টটি। কিন্তু পরে বুঝতে পারি এটি মিথ্যা তথ্য। এরপর আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সত্যতা পাইনি।’

আমিনুল মুনতাসিরের ফেসবুক প্রোফাইলের পরিচয়ে লেখা চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাংগঠনিক সদস্য। বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায়। সে হিসেবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, বিমান বিধ্বস্তে কক্সবাজারের কেউ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

পেকুয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন চৌধুরী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘পেকুয়া উপজেলা থেকে মাইলস্টোন ট্র্যাজাডিতে কোনো শিক্ষার্থী বা শিক্ষক হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কক্সবাজার সদরের এক শিক্ষার্থী আহত হলেও বর্তমানে সে সুস্থ।' তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের ব্যপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, ‘আমাদের এসব এলাকার মানুষ বিভিন্ন ঘটনাতেই অপপ্রচার বেশি চালাই, পরিবেশগত দিক থেকেই এরা এমন। আমি পুলিশ কে এ ব্যাপারে জানাব যেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাইলস্টোনের ক্যাম্পাস কো-অর্ডিনেটর লুৎফুন্নেসা লোপা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের আহত এবং লাশ গুমের অপতথ্য নিয়ে ফেসবুকে অপতথ্য ছড়াচ্ছেন একটি মহল। আমরা আমাদের যে সকল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে এবং আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন তাদের তালিকা করেছি। ‘মিরসাদ ইসলাম আযান’ নামে কোন শিক্ষার্থী মারা গিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নামের কোন শিক্ষার্থী মারা যায়নি। নিহত অথবা আহতদের তালিকায়ও এই নামের কোন শিক্ষার্থী নেই বলে জানান তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩২ জন; যাদের মধ্যে ২৬ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন অভিভাবক, ২ জন শিক্ষক এবং ১ জন কর্মচারী। এছাড়া অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ৫২ জন; যাদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও কর্মচারী রয়েছেন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, স্কুল শাখার বাংলা ভার্সনের ১০ জন, ইংরেজি ভার্সনের ১৩ জন এবং মিশ্র তালিকায় আরও ১৩ জন শিক্ষার্থীসহ কলেজ শাখার ৪ জন মিলিয়ে আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ জনে। পাশাপাশি আহত হয়েছেন বাংলা ভার্সনের ৩ জন ও ইংরেজি ভার্সনের ৫ জন শিক্ষক, ২ জন অভিভাবক ও ২ জন কর্মচারী। সব মিলিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ৫২ জন, যাদের বেশিরভাগই ভর্তি রয়েছেন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, সিএমএইচ, ইউনাইটেড হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে।

বাংলা ভার্সনের আহতদের তালিকা
বাংলা ভার্সনের চতুর্থ শ্রেণির কাকাতুয়া সেকশনের শিক্ষার্থীরা— তাসরুবা মাহাভীর, রুবায়দা নূর আলবিরা, আশরিবা জান্নাত রাইসা, তাসমিয়া খন্দোকার, মেহেরিন, সাইবাহ জাহান, সামিরা জাহান, নুসরাত জাহান ও সায়েবা মেহেজাবিন বর্তমানে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি। একই শ্রেণির রাফসি আক্তার রাফিয়া ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

তৃতীয় শ্রেণির রেইনবো সেকশনের শ্রেয়া ঘোষ, চতুর্থ শ্রেণির বুলবুল সেকশনের সামিয়া আক্তার (আইসিইউ), মো. আয়ান খান, ডোয়েল সেকশনের আবিদুর রহিম আবিদ, ইমাম হোসেন জুনায়েদ, পঞ্চম শ্রেণির টিউবারোজ সেকশনের আহারার হোসেন (সিএমএইচ), তৌফিক হোসেন, সানফ্লাওয়ার সেকশনের রুপি বড়ুয়া, মুনতাহা তোয়া কর্ণ, নুরি জান্নাত উষা, জান্নাতুল মাওয়া, ওয়াটার লিলি সেকশনের কফি আহমেদসহ অনেকেই বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

কলেজ শাখার তাকরেম হক (দশম শ্রেণি, বিএসটি বয়েজ), উম্মে আয়মান আলিশা (বিএসটি গার্লস) আহতদের মধ্যে রয়েছেন।

বাংলা ভার্সনের শিক্ষিকাদের মধ্যে সুমাইয়া ইসলাম লারিন ও মাহফুজা খাতুন বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন, মাহফুজা আইসিইউতে। কণক চাঁপা সিএমএইচে ভর্তি। আহত অভিভাবকদের মধ্যে রয়েছেন আয়ান খানের মা এবং সূর্য সোময় বিশ্বাসের বাবা মুকুল হোসেন। কর্মচারী সবুজা বেগমও বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

ইংরেজি ভার্সনের আহতদের তালিকা
ষষ্ঠ শ্রেণির আহনাফ ইসলাম নিলয়, নাফিসা আহমেদ পায়েল, জায়ানা মাহবুব, সপ্তম শ্রেণির আতার মোর্শেদ কব্বো, শহীদ ফারাবী আয়ান, রবিউল হিসসাইম নাবিল, আরিয়ান আফিফ, নভিদ নাওয়াজ দীপ্ত (আইসিইউ), তাহসিন আয়ান, সূর্য সোময় বিশ্বাস (বর্তমানে ছাড়া পেয়েছেন), অষ্টম শ্রেণির তাসনিয়া হক, এসকে তাজকির রহমান, রাইয়ান তৌফিকসহ অনেক শিক্ষার্থী বার্ন ইউনিট ও অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি।

কলেজ শাখার দ্বাদশ শ্রেণির সায়মন বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে। এইচএসসি পরীক্ষার্থী শাহজাতি দিয়ারা রিচি চিকিৎসাধীন লুবানা হাসপাতালে। এছাড়াও ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষকদের মধ্যে আখতারুজ্জামান বাপ্পি আহসানিয়া মিশনে, শিক্ষিকা নিশি আক্তার ও ফারজানা ইয়াসমিন লিনা, আশরাফুল ইসলাম বার্ন ইনস্টিটিউটে এবং আনোয়ার হোসেন সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। পিয়ন মোহাম্মদ আতিক চিকিৎসাধীন সিএমএইচে।

নিহত ৩২ জনের তালিকা
নিহতদের মধ্যে ২৬ জনই শিক্ষার্থী; যাদের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখার শিশুরাও রয়েছে। নিহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, আরিয়ান আশরাফ নাফি, মোহাম্মদ শামিম, তাহিয়া আশরাফ নাজিয়া, মাহতাব রহমান, শায়ান ইউসুফ, জারিফ ফারহান, মোহাম্মদ আফনান ফাইয়াজ, শামিউল করিম, আব্দুল মুবাসসির মাকিন, উক্য চিং মারমা, মাহিয়া ইয়াসমিন মায়া, তানভীর আহমেদ, মরিয়ম উম্মে আফিয়া, ওয়াকিয়া ফেরদৌস নিধি, রাইসা মনি, মেহরেনাজ আফরিন হুমাইরা, বরহান উদ্দিন বাপ্পি, সারিয়া আলকেতার, নুসরাত জাহান, সাইমা আক্তার, ওমায়ের, ফাতেমা, মো. জুনায়েদ হাসান, সাদ সালাহ উদ্দিন, তাসনিম আফরোজ আয়মান এবং মাহিত হাসান আরিয়ান।

তিন জন নিহত অভিভাবক হলেন, এসএম ঝুমঝুমের মা রাজনি ইসলাম, লামিয়া আক্তারের মা মোছা. আসমাউল হুসনা এবং আফসানা আক্তারের মা আফসান ওহি। নিহত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন মাহেরিন চৌধুরী ও মাসুকা বেগম। নিহত কর্মচারী হলেন মাসুমা বেগম। বিদ্যালয়টির প্রাপ্ত এ তালিকায় মিরসাদ ইসলাম আযান নামের কোন শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া যায়নি।

 

 

গ
ছড়িয়ে পড়া ছবিটি মিরসাদের নয় দাবি; নিজেকে বৈষম্যবিরোধী নেতা দাবি আমিনুলের

সতর্ক করল পুলিশ
ঢাকা মহানগরীতে মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘যেকোনো ধরনের মিথ্যা তথ্য বা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে তৎপর রয়েছি। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপতথ্য ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যেকোন ধরনের গুজব ও মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘যে বা যারা এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াচ্ছে, আমরা তাদের শনাক্তের চেষ্টা করছি। খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’