অস্বাভাবিক জোয়ারে সোনাগাজীর ১০ গ্রাম প্লাবিত

অস্বাভাবিক জোয়ারে একটি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে
অস্বাভাবিক জোয়ারে একটি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে © টিডিসি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে ছোট ফেনী নদীর পানি প্রবেশ করে সোনাগাজী উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও সড়ক তলিয়ে গেছে। অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত টেকসই রেগুলেটর নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

শনিবার (২৬ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় নদীর পানি প্রবেশ করায় নদীতীরবর্তী সায়েদপুর, চর ইঞ্জুমান, মাদ্রাসাপাড়া, আমতলী, ইতালি মার্কেট, রহমতপুর, তেল্লারঘাট, কাজীরহাটসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানি বাড়ার ফলে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর, টিউবওয়েল, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির ঘর সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল সিদ্দিকী বলেন, ‘মুছাপুরে রেগুলেটরটি না থাকায় প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ছে। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মাছের ঘের সবকিছুই বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু শনিবারের জোয়ার ছিল একেবারেই অস্বাভাবিক। এমন উচ্চতার পানি এর আগে কখনো দেখিনি।  আমরা এ অবস্থার দ্রুত সমাধান চাই। একটি টেকসই রেগুলেটর নির্মাণ না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।’

মোহাম্মদ মোস্তফা নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘মুছাপুর রেগুলেটরটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই আমরা এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করছি। প্রতি বছর বর্ষা আসার আগেই জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। অথচ আমরা বহুবার স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা ক্ষতির আশঙ্কার কথা বলে আসছি অনেকদিন ধরে, কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি।’

এদিকে জোয়ারের লোনাপানিতে হুমকিতে পড়েছে এসব এলাকার কৃষিজমি ও মৎস্যঘের। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এসব এলাকার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে।

স্থানীয় মৎস্যচাষী সজিব রায়হান বলেন, প্রতিদিন জোয়ারের লোনাপানি ঢুকে পড়ায় মৎস্য খাতে বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। বর্ষায় পানি আরও বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় মাছের ঘের বা ফসলি জমিতে চাষাবাদ করলে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি, লাভের কিছু হবে না।

আবু সায়েদ রুবেল নামের এক কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, জোয়ারের পানি লোকালয়ে ডুকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে এসব অঞ্চলের অনেকেই এখন আর চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, জোয়ারের পানি নদী হয়ে খালে প্রবেশ করে চরদরবেশ, চরছান্দিয়া, বগাদানা ও চরমজলিশপুর এলাকার কৃষিজমি প্লাবিত করছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি এইসব এলাকায় চাষাবাদ না করে উঁচু জমিতে ফসল করতে। জেলা কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জেলাজুড়ে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. আবু মুসা রকি বলেন, ‘আমরা হুগলি স্লুইস গেটসহ প্লাবিত অঞ্চলগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। সেখানে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫.১৪৬ মিটার। অমাবস্যায় এমনিতেই পানি বাড়ে, তার ওপর রেগুলেটর না থাকায় সাগরের উত্তাল পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এ জন্য নিম্নাঞ্চলের যেসব বাড়িঘর রয়েছে সেগুলোতে পানি জমেছে।’