বৈরী আবহাওয়ায় খালি হাতে ফিরছেন উপকূলের জেলেরা

খাপড়াভাঙ্গা নদীর উপকূলীয় মৎস্যবন্দরে
খাপড়াভাঙ্গা নদীর উপকূলীয় মৎস্যবন্দরে © টিডিসি

উত্তাল সমুদ্র আর বৈরী আবহাওয়ার কারণে আবারও খালি হাতে ঘাটে ফিরছেন পটুয়াখালীর উপকূলবর্তী জেলেরা। কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা না পেয়ে দাদনের দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন তারা। চলতি মৌসুমে একের পর এক দুর্যোগ আর নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে এই পেশা।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। যার প্রভাবে সমুদ্র দ্রুত উত্তাল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতির অবনতির কারণে উপকূলীয় মৎস্যবন্দর মহিপুর-আলিপুর সংলগ্ন খাপড়াভাঙ্গা নদীতে ফিরে এসে নিরাপদ আশ্রয় নেয় শত শত মাছ ধরার ট্রলার। নদীর পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আকাশজুড়ে ঘন মেঘের আস্তরণ।

জেলেদের অভিযোগ, মৌসুমের শুরুতেই ৫৮ দিনের মৎস্য অবরোধের পর আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়েনি। এরপর ঘন ঘন নিম্নচাপ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এতে উপকূলজুড়ে হতাশা ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

মহিপুর এলাকার ট্রলার মাঝি এখলাস গাজী বলেন, ৫৮ দিনের অবরোধ শেষে আমরা সমুদ্রে গিয়ে তেমন একটা লাভ করতে পারিনি। দুই-একদিন মাছ ধরার পরই আবার বৈরী আবহাওয়া শুরু হয়, বাধ্য হয়ে ঘাটে ফিরতে হয়। বাজার খরচের টাকা উঠছে না, উলটো ঋণ বাড়ছে।

আলিপুর মৎস্যবন্দর ব্যবসায়ী জাফর হাওলাদার জানান, প্রতিটি ট্রলারে কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে সাগরে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রায়ই বৈরী আবহাওয়ার কারণে খালি হাতে ফিরে আসে ট্রলার। এতে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।

একই হতাশার কথা জানিয়ে মহিপুরের মৎস্য ব্যবসায়ী মাহতাব হাওলাদার বলেন, ইলিশের দাম আকাশচুম্বী হলেও পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। জেলেরা সমুদ্রে যেতে না পারায় আমরাও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজু আহমেদ রাজা মিয়া বলেন, এই মৌসুমে এখনো ভালোভাবে ব্যবসা শুরুই করতে পারিনি। লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়েও আমরা লোকসানে পড়েছি। এভাবে চললে হয়ত ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।

পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এতে উপকূলীয় এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, সমুদ্র বেশ উত্তাল রয়েছে। মৎস্যজীবীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ এই আবহাওয়া আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।