চিকিৎসায় রাজনৈতিক পরিচয় খোঁজা হয়েছিল তন্বির, পুলিশ থেকে টাকা নিয়ে পুলিশের গাড়িতেই রং সাদমানের
- ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৫
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গত বছরের ১৫ জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সেদিন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। এদিন সানজিদা আহমেদ নামের এক তরুণীর রক্তাক্ত মুখ, ভাঙা চশমার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সে সময় এক যুবককে পুলিশি গ্রেপ্তার থেকে রক্ষা করতে জড়িয়ে ধরেন নারী শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান টুম্পা। এ ছাড়াও সৈয়দ সাদমান নামের এক যুবক পুলিশের গাড়িতে প্রতিবাদী লেখা লেখতে আর্থিক সহযোগিতা ও রং করার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওয়ের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বি বলেন, ‘একটা ইট এসে আমার চোখের নিচে পড়ে। সেই জায়গায় ক্ষত হয়, চশমার কাঁচ ভেঙে যায়। চোখে ছয়টি সেলাই দিতে হয়। আমি তখন চোখে দেখতে না পারায় মেডিকেল থেকে পালিয়ে এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নিই। তিনি বলেন, আমার ছবি ভাইরাল হয়ে যাওয়ায়, ছাত্রলীগসহ অনেকে আমাকে ও আমার পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করে। নিয়মিতভাবে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের কিছু সদস্য আমার পরিবারকে ফোন দিয়ে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চায়। জানতে চায় আমি কোথায় আছি। এতে আমার পরিবার গভীর দুশ্চিন্তায় পড়ে। চোখের চিকিৎসাও বাধাগ্রস্ত হয় তার। আমি সময়মতো সেলাই কাটাতে পারিনি। পরে আগস্টে চোখের চিকিৎসা সম্পন্ন করি।
তিনি আরও বলেন, ‘যে একতা নিয়ে আমরা আন্দোলনে গিয়েছিলাম, সেই একতা নিয়ে যেন নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমরা কাজ করে যেতে পারি এটাই আমার প্রত্যাশা।’
কোটা আন্দোলনে অংশ নেন নানা পেশার মানুষ। পুলিশের গুলিতে যখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা আহত হচ্ছিলেন, তখন নৈতিকতা ও মানবিকতার তাগিদে রাস্তায় নেমে আসেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান টুম্পা। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে তিনি একাই পুলিশের মুখোমুখি হন ও পুলিশের প্রিজন ভ্যান আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
নুসরাত জাহান টুম্পা বলেন, ‘সেদিন আমি এভাবে সাহস দেখিয়েছি, এটা আমি এখনো কল্পনা করি। কীভাবে আমি পারলাম!। সেদিন পুলিশের সামনে দাঁড়াতে পেরেছিলাম। এটা সে সময়কার পরিস্থিতিরিই একটা প্রতিফলন। তখন শিশু পর্যন্ত বাসায় বসে নিরাপদ ছিল না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে শিশু গুলি খেয়ে মারা গেছে। তিনি বলেন, আমার নৈতিকতার জায়গা ও প্রয়োজনবোধ থেকে আন্দোলনে এসেছি। আন্দোলন শেষে আবার আমার নিজ অবস্থানে ফিরে গিয়েছি। ভবিষ্যতে কী পাব, এটা ভেবে আন্দোলনে আসেনি। সে সময় মনে করেছিলাম, দেশটা যখন স্বৈরাচারমুক্ত হবে, তখন আমরা উন্নত দেশের মতো নাগরিক অধিকার পাব।’
পুলিশের গাড়িতে কালো স্প্রে করার বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থী সৈয়দ সাদমান জানান, সেদিন তিনি একজন পুলিশ সদস্যের কাছ থেকেই রং কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি সমন্বয়ক নয়, কোনো সমন্বয়ক লিস্টে আমার নাম দেখবেন না। আমি কোনো প্ল্যাটমর্ফের সঙ্গে যুক্ত না। আমি সাধারণ ছাত্র। আন্দোলনের মালিকানা ব্যক্তিগতভাবে কারোরই না। আন্দোলনটা ছিল ছাত্র-জনতার। ৫ আগস্টের পরে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও আমজনতা যে প্রতিফলন চেয়েছিল, সেটা পরিপূর্ণ হয়নি।’ [বিবিসি বাংলার ভিডিও স্টোরির আলোকে]