চাপাতির কোপ দিয়ে মোবাইল-মানিব্যাগ ছিনতাই ও মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সঙ্গে ১ ঘন্টা

আহমাদ ওয়াদুদ ও পুলিশের লোগো
আহমাদ ওয়াদুদ ও পুলিশের লোগো © টিডিসি সম্পাদিত

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আহমাদ ওয়াদুদ নামে একজন সাংবাদিকের ওপর ছিনতাইকারীরা চাপাতি দিয়ে আঘাত করে তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ১১টার দিকে বেড়িবাঁধ তিন সড়কের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী সাংবাদিকের অভিযোগ, ছিনতাইয়ের পর তিনি মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে সহযোগিতা চাইলেও উল্টো পুলিশের অবহেলা ও কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়।

ঘটনা শুনে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান ভুক্তভোগীকে বলেন, আমি ওসি হয়েও এই কমদামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি পোস্টও দিয়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। পোস্টটি ভাইরাল হলে একজন এসআই, একজন এএসআইসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে বহিস্কার করেছে পুলিশ।

পরবর্তীতে পুলিশের অভিযানে ইউসূফ (২৫) সিয়াম (২৭) নামে ৩জন চিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানান, ঘটনার সময় তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে বেড়িবাঁধ এলাকায় অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ একদল ছিনতাইকারী এসে তার কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। তিনি জানান, তার স্ত্রীর কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়নি। ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রী মোহাম্মদপুর থানায় যান। ডিউটি অফিসার এসআই জসিমের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তিনি প্রথমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং অভিযোগ লেখার লোক নেই বলে জানান। পরে ভুক্তভোগী নিজেই অভিযোগ লিখলেও তার কোনো কপি দেওয়া হয়নি। তাকে এএসআই আনারুলের সাথে ফোনে কথা বলতে বলা হয়, যিনি ঘটনাস্থলে যেতে পারবেন।

সাংবাদিক আহমাদ ওয়াদুদ অভিযোগ করেন, তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের অনুরোধ করলে এসআই জসিম তা নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘এতো রাতে গিয়ে কোনো লাভ নেই, ছিনতাইকারীদের আর পাওয়া যাবে না।’ পরে তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসানের কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘আমি ওসি হয়েও কমদামি ফোন ব্যবহার করি। আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই।’

ভুক্তভোগী তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের অনুরোধ জানালে এসআই জসিম তা সম্ভব নয় বলে জানান এবং ছিনতাইকারীদের ঘটনাস্থলে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেন। এরপর ভুক্তভোগী ওসি ইফতেখার হাসানের কক্ষে যান। ওসি তার দামী ফোন ব্যবহার নিয়ে মন্তব্য করেন এবং এএসআই আনারুলের সাথে যোগাযোগ করে তাকে বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অপেক্ষা করতে বলেন।

তিনি আরও জানান, প্রায় ৪০ মিনিট পর এএসআই আনারুল ও তার দল ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ভুক্তভোগী ছিনতাইকারীদের সেখানেই বসে থাকতে দেখিয়ে দিলেও, এএসআই আনারুল তাদের ধরতে এগিয়ে যাননি। পুলিশসহ তাদের দেখে ছিনতাইকারীরা ধীরে ধীরে সরে যায়। পরে এএসআই আনারুল ভুক্তভোগীকে জানান, রাতে অভিযান চালানো হবে এবং তাদের বাসায় চলে যেতে বলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. জুয়েল রানা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ঘটনায় যারা ভুক্তভোগীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ এ বিষয়ে কঠোর। এরই মধ্যে মোহাম্মদপুর থানার এএসআই আনারুল এবং এসআই জসিমসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আমরা ইউসূফ (২৫) সিয়াম (২৭) সহ ৩জন চিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছি। এছাড়াও ভুক্তভোগীর ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।