কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সংঘাত: সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?
- ২৬ জুলাই ২০২৫, ০০:৪০
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলা উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত রূপ নিয়েছে সরাসরি সামরিক সংঘাতে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুই দেশের সেনাবাহিনী পাল্টাপাল্টি বিমান ও রকেট হামলা চালায়। কম্বোডিয়ার সামরিক স্থাপনায় হামলার সময় থাইল্যান্ড ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। জবাবে কম্বোডিয়াও চালায় রকেট হামলা। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শুক্রবারও প্রাণঘাতী লড়াই অব্যাহত রয়েছে, যেখানে উভয় দেশ ভারী কামান এবং রকেট হামলা চালিয়েছে, যা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সামরিক সংঘর্ষ।
শুক্রবার থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সাংবাদিকদের বলেন, সামরিক সংঘাত তীব্র হয়ে উঠেছে, যা যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। সংঘর্ষে এরইমধ্যে ভারী অস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
থাই সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কৌশলগত পরিস্থিতি অনুযায়ী গুলি চালিয়ে থাই বাহিনী যথাযথ জবাব দিয়েছে।’
লন্ডন-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের বরাতে দুটি দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং অস্ত্রাগারের তথ্য তুলে ধরেছে রয়টার্স। নিচে তা আলোচনা করা হলো-
বাজেট ও স্থলবাহিনী
থাইল্যান্ড: ন্যাটো সদস্যের বাইরে অন্যতম মার্কিন মিত্র থাইল্যান্ডের একটি বিশাল ও সমৃদ্ধ সামরিক বাহিনী রয়েছে। এর প্রতিরক্ষা বাজেট (২০২৪ সাল অনুযায়ী) ৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীতে দেশটির ৩ লাখ ৬০ হাজারের বেশি সক্রিয় সশস্ত্র রয়েছে।
কম্বোডিয়া: ২০২৪ সালে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার এবং ১ লাখ ২৪ হাজার ৩০০ সক্রিয় প্রতিরক্ষা কর্মী। ১৯৯৩ সালে দেশটির প্রাক্তন কমিউনিস্ট সামরিক বাহিনী এবং দুটি অন্যান্য প্রতিরোধ বাহিনীর একীভূতকরণের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
বিমানবাহিনী
থাইল্যান্ড এয়ার ফোর্স: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সজ্জিত ও প্রশিক্ষিত বিমানবাহিনীর মধ্যে থাইল্যান্ড একটি। এই বাহিনীতে প্রায় ৪৬ হাজার সদস্য এবং ১১২টি কমব্যাট বিমান রয়েছে, যার মধ্যে আছে ২৮টি এফ-১৬ ও ১১টি সুইডিশ গ্রিপেন যুদ্ধবিমান। এছাড়াও তাদের বহরে আছে প্রায় এক ডজন উড়োজাহাজ এবং কয়েক ডজন হেলিকপ্টার।
কম্বোডিয়া এয়ার ফোর্স: দেশটির বিমানবাহিনীর সদস্য সংখ্যা মাত্র দেড় হাজার। এছাড়া দেশটির বিমানবাহিনীতে ১০টি পরিবহন বিমান ও ১০টি পরিবহন উড়োজাহাজের ছোট একটি বহর আছে। কম্বোডিয়ার বিমানবাহিনীর কাছে নেই কোনো যুদ্ধবিমান। তবে ১৬টি বহুমুখী অভিযান পরিচালনাকারী উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি সোভিয়েত যুগের এমআই-১৭ এবং ১০টি চীনা জেড-৯এস।
নৌবাহিনী
থাইল্যান্ড নৌবাহিনী: থাইল্যান্ডের নৌবাহিনী বেশ বড়। এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এতে নৌ-বিমান ইউনিট, মেরিন, উপকূলরক্ষী বাহিনী ও নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যরা রয়েছেন। থাই নৌবহরে একটি বিমানবাহী রণতরী, সাতটি ফ্রিগেট, ৬৮টি টহল ও উপকূলীয় যুদ্ধজাহাজ রয়েছে।
এছাড়া থাই নৌবহরে কয়েকটি উভচর এবং অবতরণকারী জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজে শত শত সৈন্য ও ১৪টি ছোট অবতরণকারী বিমান রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। দেশটির নৌবিমান ইউনিটের রয়েছে উড়োজাহাজ ও ড্রোনের নিজস্ব বহর। মেরিন কোরে ২৩ হাজার সদস্য আছেন। এই কোরের নিয়ন্ত্রণে আছে কয়েক ডজন সশস্ত্র যুদ্ধযান।
কম্বোডিয়ার নৌবাহিনী: কম্বোডিয়ান নৌবাহিনীর সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ২ হাজার ৮০০। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০০ নৌ পদাতিক সেনা। ১৩টি টহল এবং উপকূলীয় যুদ্ধ জাহাজ এবং একটি উভচর অবতরণ জাহাজ রয়েছে দেশটির নৌবহরে।