কোটা আন্দোলনের নিউজ করায় গ্রেপ্তার হন সাংবাদিক আবু হানিফ

 মো. আবু হানিফ
মো. আবু হানিফ © সংগৃহীত ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে জেলে যেতে হয়েছিল শেরপুর জেলার সাংবাদিক মো. আবু হানিফকে। গত বছরের  ২৩ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করেছিল শেরপুর সদর থানা পুলিশ। কোটা আন্দোলনের সময় আবু হানিফ জাতীয় দৈনিক ‘দিনকাল পত্রিকা’র জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি গত বছরের  ১৩, ১৭ ও ২০ জুলাই আন্দোলনের সময়  পুলিশ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। এরপর ২১ জুলাই পুলিশ একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করে, যেখানে আবু হানিফকে ২ নম্বর আসামি করা হয়। পরদিন ২৩ জুলাই বিকালে এ মামলায় শেরপুর শহরের কলেজ মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।   

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আবু হানিফ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি আগে থেকেই তৎকালীন সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অপকর্ম ও ভোট ডাকাতি নিয়ে সংবাদ করেছি এবং আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখালেখি করেছি। কোটা আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে লেখালেখি করেছি। কিন্তু আমার অজান্তেই ২০ জুলাই ২০২৪ সালে আমার নামে বিস্ফোরক মামলা হয়। ২৩ জুলাই বিকালে আমার ৫ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে মোটরসাইকেল করে শহরে বিরিয়ানি আনতে গিয়েছিলাম। কারফিউ থাকার কারণে কোনো দোকান খোলা ছিল না। তাই বাসার দিকে আসছিলাম। পথিমধ্যে ৪ মোটরসাইকেল করে  এসআই কামরুল ও এসআই ওয়াদুদ এর নেতৃত্বে  ৮ জন পুলিশ আমাকে ও আমার ছেলেকে ঘিরে ফেলে তারা। 

তিনি আরও বলেন, পুলিশ আমাকে বলে তোর নামে মামলা আছে, তখন আমি বলি আমার নামে যদি মামলা থাকে ওয়ারেন্ট কাগজ দেখান। তখন উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলে তুই বিএনপি নেতা, তখন আমি বলি আমি একজন সংবাদকর্মী। তখন পুলিশের এসআই ওয়াদুদ আরও উত্তেজিত হয়ে গালি দিয়ে বলে তোকেই তো খুঁজছিলাম আমরা। তখন মোটরসাইকেলে থাকা আমার শিশুসন্তান ভয়ে আর্তনাদ করতে শুরু করে। আমি তাদের অনুরোধ করি আমার সন্তানের সামনে গালিগালাজ না করতে এবং ছেলেকে বাসায় রেখে আসার জন্য সময়  চাই। আমি তাদেরকে বলি আমার ছেলেকে বাসায় রেখে যেখানে যেতে বলবেন সেখানেই যাব। কিন্তু এসআই ওয়াদুদ বলে তোর ছেলেকে আমাদের পুলিশের একজন রেখে আসবে বাসায়। কিন্তু আমি এটা মানতে রাজি না থাকায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে পুলিশসহ আমার বাসায় আসে এবং আমার ছেলেকে রেখে আমাকে থানায় নিয়ে যায়।   

তিনি আরও বলেন, আমাকে থানায় নেয়ার পর পুলিশরা বলে আমার নাকি গোয়েন্দা রিপোর্ট অনেকদিন থেকেই খারাপ। আমাকে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি তো ভয়ে আর্তনাদ শুরু করি। তখন তদন্ত ওসি শফিকুল ইসলাম আমাকে শান্ত থাকতে বলেন এবং বলেন আমি জানি আপনি ভালো মানুষ। আপনার জন্য যত ধরনের আইনি প্রক্রিয়া আছে আমি প্রয়োগ করে আপনাকে মুক্ত করবো। পরদিন ২৪ জুলাই আমাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জেলখানায় ছাত্রজনতার বিক্ষোভের পর জেল থেকে বের হই।