মাইলস্টোন ট্রাজেডি

মৃতের সংখ্যা ২৩১ জন উল্লেখ করে ফেসবুকে কবিতা লিখলেন ঢাবির আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা

ফেসবুক স্ট্যাটাস ও ঢাবি আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা মোছা. শারমিন জাহান
ফেসবুক স্ট্যাটাস ও ঢাবি আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা মোছা. শারমিন জাহান © টিডিসি সম্পাদিত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এরপর রাত থেকে নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশসহ ৬ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছে।

এই অবস্থায় নানা মত-অভিমতের মধ্যেই আজ দুপুরের পর ফেসবুকে মৃতের সংখ্যা ২৩১ জন উল্লেখ করে একটি পোস্ট করে আলোচনায় এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা মোছা. শারমিন জাহান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত শারমিন জাহান অতীতে আওয়ামী লীগের সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বরখাস্ত হয়েছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর এই কর্মকর্তাকে রেজিস্ট্রার ভবন (প্রশাসন-১ শাখা) থেকে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে বদলি করা হয়েছে।

মোছা. শারমিন জাহান ফেসবুকে একটি পোস্টার পোস্ট করে ক্যাপশনে একটি কবিতাও লিখেছেন। পোস্টকৃত পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩১ জন।’ ওই পোস্টারে তথ্য সূত্র উল্লেখ করেছেন মাইলস্টোন ফর এভার উল্লেখ রয়েছে।

এদিকে সরকারি পদে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করাকে ‌‌গুরুতর ‌‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’ বলে উল্লেখ করেছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা তৈরি হয়েছে তার এ ধরনের পোস্ট নিয়ে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি কীভাবে এমন অপ্রমাণিত এবং অপতথ্য ছড়াতে পারেন। আবার অনেকে বলছেন এমন ভুয়া পোস্ট শেয়ার করা ঠিক হয়নি।

শারমিন জাহানের ওই পোস্টে শাহী ইমরান ইমু কমেন্ট করে বলেন, ‘বন্ধু  এ ধরনের ভুয়া পোস্ট তোমার কাছ থেকে কাম্য নয়।’ এর পাল্টা প্রত্যুত্তরে শারমিন জাহান বলেন, ‘কোন কিছুকে ভুয়া বলার আগে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হয়, ভুয়া বলার ভিত্তি কি?।’

জানা গেছে, আলোচিত ওই কর্মকর্তা অতীতেও বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক বক্তব্যের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে সরকারি বিধিমালায় রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্য আবশ্যক, তাতে আবারও প্রশ্ন উঠেছে, এই নিয়ম কি তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়? তবে অনেকের অভিযোগ, বর্তমান সরকারকে বিপদে ফেলতেই এমন অপপ্রচারে নেমেছেন তিনি। এ ধরনের তথ্য বিভ্রান্তি শুধু জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে না, বরং সরকারের তদন্ত ও উদ্ধার কার্যক্রমকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। ফলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোছা. শারমিন জাহানকে একাধিকবার তার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে এমন সংবেদনশীল ব্যাপারে ভুয়া তথ্য কিংবা অপপ্রচার চালাতে পারেন কী না জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সরকারি কোন কর্মকর্তা হোক, আর যেই হোক, কেউ এমন অপতথ্য ছড়াতে পারে না’।

তিনি বলেন, ‘মিথ্য তথ্য দেওয়ার কোন সুযোগও নেই, এখতিয়ারও নেই। যে কোন বিষয়ে সত্য তথ্য দিতে হবে, মিথ্য তথ্য দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ব্যাপারটি আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

জানা গেছে, শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক পদে ছিলেন। আওয়ামী লীগের কমিটিতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। এর আগের কমিটিতে একই উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত রয়েছেন তিনি। তার বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলার শ্যামগঞ্জের গোহালকান্দায়।