টিকটকে পরিচয়, পরে বিয়ে—দাম্পত্য কলহে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, স্বামী গ্রেপ্তার
- ২১ জুলাই ২০২৫, ১৬:৩৭
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় টিকটকে পরিচয়ের সূত্র ধরে গড়ে ওঠা প্রেম ও বিয়ে একপর্যায়ে ভয়াবহ পরিণতিতে গড়ায়। পারিবারিক কলহের জেরে ঘুমন্ত স্ত্রী ফাতেমা বেগম রূপালীকে (৩৬) দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন তার স্বামী জামাল গাজী (৩৮)। হত্যার পর মৃতদেহ ফেলে রাখা হয় টয়লেটের ট্যাংকিতে। ঘটনার ১০ দিন পর কুষ্টিয়া থেকে ঘাতক জামালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুর জেলা পুলিশের আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. লুৎফর রহমান।
নিহত ফাতেমা বেগম রূপালী চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ ঘোড়াধারী গ্রামের বাসিন্দা। আর অভিযুক্ত জামাল গাজীর বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গেড়ামর্ধন গ্রামে।
পুলিশ জানায়, প্রায় ১১ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকে তাদের পরিচয় হয়। রূপালী নিজেকে আদালতের পিপি-র সহকারী পরিচয় দিলেও জামাল ছিলেন গার্মেন্টসকর্মী। পরিচয়ের কিছুদিনের মধ্যে তারা কক্সবাজার ও সিলেটে ভ্রমণ করেন। পরে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ৩ লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে হয়। এটি জামালের তৃতীয় এবং রূপালীর পঞ্চম বিয়ে।
বিয়ের পর জামাল এক মাস শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। পরে তাদের দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন শুরু হয়। স্বামী আগের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন ও টাকা পাঠান—এমন সন্দেহে রূপালী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে জামাল ১১ ভরি স্বর্ণ ও ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। স্বর্ণ ফেরত দিলেও টাকা ফেরত না দেওয়ায় রূপালী মামলা ও তালাকের হুমকি দেন।
পুলিশ আরও জানায়, ঘটনার চার দিন আগে রূপালী জামালকে মারধর করেন ও খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেন। ১০ জুলাই রাতে টাকার দাবিতে ঝগড়ার একপর্যায়ে রূপালী জামালকে কোরআন শরীফ দিয়েও আঘাত করেন।
১১ জুলাই রাত সাড়ে ৩টার দিকে জামাল ঘরে থাকা ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত রূপালীর মাথা ও গলায় কোপ দেন। পরে মৃতদেহ টেনে টয়লেটের পাশে নিয়ে পুনরায় আঘাত করে সেটি ট্যাংকির ভেতর ফেলে পালিয়ে যান।
পরদিন নিহতের ছেলে টিপু পাটোয়ারী (২১) বাদী হয়ে মতলব দক্ষিণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলার তদন্তে নামে মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) জীবন চৌধুরীর নেতৃত্বে এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) মো. খায়রুল কবীর ও ওসি মো. সালেহ আহাম্মদের তত্ত্বাবধানে একাধিক অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলে নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহসহ একাধিক জেলা। অবশেষে ২০ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার বৃত্তিপাড়া বাজার এলাকা থেকে জামালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জামাল গাজী স্ত্রীকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে নিহতের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে।
চাঁদপুর জেলা পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।