গাজায় ত্রাণপ্রার্থী ৯২ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী, অনাহারে মারা গেছেন আরও ১৯

খাদ্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিরা
খাদ্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিরা © সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১৫ জন ফিলিস্তিনি। যাদের অধিকাংশই ছিলেন ত্রাণের আশায় অপেক্ষমাণ সাধারণ মানুষ। এ হামলা গত মে মাসের পর থেকে গাজায় ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর চালানো অন্যতম প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সোমবার (২১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিং এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে জড়ো হওয়া জনতার ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গোলাবর্ষণে প্রাণ হারান অন্তত ৬৭ জন। দক্ষিণ গাজায় আরেকটি বিতরণকেন্দ্রের কাছে নিহত হন আরও ছয়জন। আগের দিন এমন হামলায় মারা গিয়েছিলেন ৩৬ জন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, এসব হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন, অনেকে গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন। মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি।

আহমেদ হাসুনা নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার সঙ্গে এক যুবক ছিল। হঠাৎ গ্যাস নিক্ষেপ শুরু হলে আমরা দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কোনোভাবে প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছি।’

আরেক বাসিন্দা রিজেক বেতার জানান, আহত এক বৃদ্ধকে তিনি সাইকেলে করে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ‘আমরা নিজেরাই আহতদের সরিয়ে নিচ্ছি। এখানে অ্যাম্বুলেন্স নেই, খাবার নেই, বেঁচে থাকার কোনো উপায় নেই’ বলেন তিনি।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানায়, গাজায় প্রবেশের পরপরই তাদের ২৫টি ট্রাকের একটি ত্রাণবহরে গুলি চালানো হয়। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, “ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা বেসামরিক মানুষের ওপর সহিংসতা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ‘তাৎক্ষণিক হুমকির’ জবাবে ‘সতর্কতামূলক গুলি’ ছুড়েছে। তবে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ বহরে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এদিকে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ গাজায় পরিস্থিতিকে ‘চরম বিপর্যয়কর’ বলে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি জানায়, বহু শিশু খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে, অনেকেই অপুষ্টিতে ভুগছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (CAIR) ইসরায়েলের এ হামলাকে “গণহত্যা” বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেন, “পশ্চিমা সরকারগুলো জানে কী হচ্ছে। তারা দেখছে ক্ষুধার্ত মানুষ কীভাবে মারা পড়ছে, ঘরছাড়া হচ্ছে— তবু চুপ করে আছে।”

ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘গাজার মানুষ বারবার আমাদের জানাচ্ছে তারা খাবার পাচ্ছে না। অথচ কয়েক কিলোমিটার দূরে তা মজুদ থাকলেও পৌঁছাতে দেওয়া হচ্ছে না।’ সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের কাছে তিন মাসের খাবার মজুদ থাকলেও ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল তা আটকে রেখেছে।

গাজায় প্যালেস্টিনিয়ান মেডিকেল রিলিফ সোসাইটির প্রধান ড. মোহাম্মদ আবু আফাশ জানান, রাস্তায় অনেক নারী ও শিশু ক্ষুধায় অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আমরা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছি।’

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ম্যালনিউট্রিশন ও পানিশূন্যতায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৭১ শিশু। আরও ৬০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। শুধু রবিবারেই ক্ষুধায় মারা গেছেন অন্তত ১৮ জন।