থালার আকারের সঙ্গে স্বাস্থ্যের কী সম্পর্ক?

স্বাস্থ্যের সঙ্গে আহারের পরিমাণের যোগ রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন
স্বাস্থ্যের সঙ্গে আহারের পরিমাণের যোগ রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন © সংগৃহীত

গত কয়েক বছরে অনেক ক্ষেত্রেই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে খাবার পরিবেশনের বিষয়েও। পাশাপাশি থালায় পরিবেশন করা খাবারের পরিমাণেও বদল এসেছে। গত কয়েক বছরে পরিবেশন করা খাবারের গড় পরিমাণ বেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এটা ঠিক যে কে কতটা খাবার খান, সেটা তাদের জানা। কিন্তু বাস্তবে আহারের সময় তিনি কতটা 'কনজিউম' করছেন বা খাচ্ছেন , তা বেশ কয়েকটা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এর মধ্যে একটা হলো–– আমরা যে থালায় বা প্লেটে খাবার খাচ্ছি সেটা কতটা বড়। এ ছাড়া খেতে বসে আমাদের কতটা খাবার পরিবেশন করা হলো তার ওপরেও আহারের পরিমাণ নির্ভর করে।

গবেষকদের অনেকেই এই বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন যে কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা বেশি পরিমাণে খাবার খেয়ে ফেলি এবং স্বাস্থ্যের ওপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে?

কেন অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলি আমরা? এই বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছেন লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাপেটাইট কন্ট্রোল অ্যান্ড এনার্জি ব্যালেন্স’ (ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ ও শক্তি ভারসাম্য) বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক জেমস স্টাবস।

তার কথায়, ‘মানুষ যখন প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত আহার করেন, তখন তাদের মধ্যে খাদ্য গ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কিত এমন অভ্যাস তৈরির ঝুঁকি থাকে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। এই জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেলে তার প্রভাব খারাপ হতে পারে।’

অতিরিক্ত পরিমাণে আহারের নেপথ্যে ঠিক কী কী কারণ, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু আকর্ষণীয় মার্কেটিং, লোভনীয় অফার, প্রি-প্যাকেটজাত খাবারের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতাই এর কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ ছাড়া রেস্টুরেন্টের ‘ভ্যালু ফর মানি’ (দামের অনুপাতে বিক্রি করা খাবার) খাবারের অফার এবং বড় প্লেটে খাবার পরিবেশনের কারণেও আমরা অনেক সময় বেশি আহার করে ফেলি।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু ও করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন নির্দেশনা জারি

ব্রিটিশ ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ও রন্ধন বিশেষজ্ঞ ক্লেয়ার থর্নটন-উড বলেন, ‘১৯৭০-এর দশকে একটা প্লেট গড়ে ২২ সেন্টিমিটার হতো। এখন তা বেড়ে ২৮ সেন্টিমিটার হয়েছে। তার মানে আমাদের খাবারের পরিমাণও বেড়েছে। তা ছাড়া রেস্তোরাঁগুলোও বেশি খাবার পরিবেশন করছে। বাড়িতেও ঠিক এটাই করা উচিত কি না তা নিয়েও মানুষ দ্বিধায় পড়েছেন।’

কতটা আহার করা উচিত?
ঠিক কী পরিমাণ খাবার খাওয়া উচিত, সেটা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন আমাদের বয়স, লিঙ্গ, ওজন, উচ্চতা, কায়িক পরিশ্রম ইত্যাদি। যদি কেউ কঠোর পরিশ্রমী হন বা খেলোয়াড় তাহলে তার বেশি পরিমাণে খাবারের প্রয়োজন হবে। আর কেউ যদি অফিসে বসে কাজ করেন, মানে যদি কারও কায়িক পরিশ্রম খুব বেশি না হয়, তাহলে তার খাবার কম লাগে।

ক্লেয়ার থর্নটন-উডের মতে এই প্রসঙ্গে দিনে কেউ কতবার খাচ্ছেন এবং সারাদিনে কী কী খাচ্ছেন এই বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ।

তার কথায়, ‘আমাদের কতটা খাওয়া উচিত, সেটা নির্ধারণ করার একটা সহজ উপায় রয়েছে। আমরা কিন্তু আমাদের হাতের তালু থেকেই সেই বিষয়ে অনায়াসে জানতে পারি। আপনার হাতের তালুর সমান খাসির মাংস, মুরগি বা মাছ এবং দুই হাত মিলিয়ে যতটা সব্জি রাখা যায়, ততটুকুই আপনার জন্য যথেষ্ট।’

এ ছাড়া সারা দিনে এক মুঠো কার্বোহাইড্রেট (আলু, ভাত, পাস্তা ইত্যাদি) এবং এক মুঠো ফল খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিরোধ দিবস নিয়ে ডকুমেন্টারি, ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ শিক্ষার্থীদের

অধ্যাপক স্টাবস আবার ব্যাখ্যা করেছেন একজন স্বাস্থ্যবান নারীর প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার ক্যালোরি প্রয়োজন এবং পুরুষের প্রায় আড়াই হাজার ক্যালোরি প্রয়োজন। কে কতটা খাবার খাবেন তার পরিমাণ এই ভিত্তিতে নির্ধারন করা যেতে পারে।

তার কথায়, ‘প্রত্যেকটা মানুষই আলাদা, তাই গড়ে কতটা খাবার খাওয়া উচিত তার পরিমাণ নির্ধারণ করা ঠিক হবে না। কিন্তু কেউ যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খান, তাহলে তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।’

কীভাবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া এড়ানো যায়?
ক্লেয়ার থর্নটন-উড বলেছেন, ‘অনেকেই বুঝতে পারেন না যে সবার একই পরিমাণ খাবারের প্রয়োজন নেই।’

উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো পরিবারে খাবার পরিবেশন করার সময় হয় সব সদস্যদের যে একই পরিমাণ খাবার দিতে হবে, তেমনটা নয়। বরং যার যা প্রয়োজন সেই অনুযায়ী তাদের খাবার পরিবেশন করা উচিত। এ ছাড়া খাবারের পরিমাণ বুঝতে, পরিবেশন করার সময় চামচ ব্যবহার করাই সঠিক উপায়।

স্বাস্থ্যের জন্য ভালো খাবার এই বিষয়ের ওপর নির্ভর করে না যে কোনো ব্যক্তি কতটা পরিমাণে আহার করছেন। তিনি কী খাচ্ছেন তার ওপরও নির্ভর করে।

উড বলেছেন যে প্রোটিন বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা রয়েছে এমনটা বোধ হয়। বিনস ও সবজি দিয়ে স্যুপও ভালো। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার ও জল রয়েছে। ফ্যাটে অন্য খাবারের চেয়ে বেশি ক্যালোরি থাকে। এই জাতীয় খাবার খেলে তৃপ্তিবোধও হয়।

আরও পড়ুন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের অবদান ৫০ শতাংশ

তার মতে, সীমিত পরিমাণে অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, মাছ, বাদাম এবং বীজের মতো খাবার থেকে স্বাস্থ্যকর স্বাথ্যকর ফ্যাট সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা ভালো।

অধ্যাপক স্টাবস সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তবে তিনি মনে করেন আপনি যা খেতে ভালোবাসেন, সেটা ছেড়ে দেওয়ার দরকার নেই।

তিনি বলেছেন, ‘ডায়েটের ৮০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর, কম ক্যালোরিযুক্ত পুষ্টিকর খাবার হতে পারে এবং বাকি ২০ শতাংশ আমাদের প্রিয় খাবার বা উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার হতে পারে।’

তবে কতটুকু খাচ্ছেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে, পরিমিত পরিমাণে খাবার খাওয়া এবং সুস্থ থাকার কথা বলছেন দুই বিশেষজ্ঞই।
সূত্র: বিবিসি