জামায়াতের মহাসমাবেশে লাখো মানুষের ঢল, পৌঁছেছেন আমির

জামায়াতের মহাসমাবেশে লাখো মানুষের ঢল
জামায়াতের মহাসমাবেশে লাখো মানুষের ঢল © জামায়াতের সৌজন্যে

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে লাখো জনতার ঢল। সাত দফা দাবির পক্ষে আয়োজিত এই মহাসমাবেশে অংশ নিতে সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেন দলটির নেতাকর্মীরা। আয়োজকদের দাবি, সমাবেশে অংশ নিয়েছেন অন্তত ১০ লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থক।

দুপুর ২টায় দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে মূল সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তার আগেই তিনি উদ্যান চত্বরে প্রবেশ করলে দলীয় নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখরিত হয় চারপাশ। স্লোগানে সাড়া দিয়ে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান আমির, এসময় তাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।

058

সকালে ৯টা ২৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার। এরপর সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের সূচনা পর্ব। এতে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীসহ দেশখ্যাত শিল্পীরা পরিবেশন করেন দেশপ্রেম, সংগ্রাম এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান নিয়ে ইসলামী সংগীত ও কবিতা।

সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন প্রতিটি জেলার প্রতিনিধিরা। অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই দলীয় প্রতীক ও টিশার্ট পরে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে মাঠে অবস্থান নেন। ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে তারা মিছিল আকারে উদ্যানের ভেতরে প্রবেশ করতে থাকেন। কেউ কেউ ‘সাত দফা মানতে হবে’, ‘আগে সংস্কার পরে নির্বাচন’, ‘গণহত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগানে উদ্যান প্রকম্পিত করে তোলেন।

সমাবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিতে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি প্রতিটি প্রবেশপথে নিরাপত্তা টিম মোতায়েন করা হয়। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রায় আট হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ছিলেন।

এর আগে শুক্রবার রাত থেকেই ঢাকামুখী নেতাকর্মীদের আগমন শুরু হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রেন, বাস ও নৌপথে এসেছেন অনেকে, কেউবা পায়ে হেঁটে সমাবেশে অংশ নিতে উপস্থিত হন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও বর্ষণ উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক কর্মীর অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর পশ্চিম থানা জামায়াতের রুকন মো. আবু সাঈদ জানান, ‘সকাল ৯টা থেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। সাত দফা দাবি দেশের স্বার্থে, জনগণের অধিকার রক্ষায় অবিচলভাবে আমরা কাজ করে যাবো।’

সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন, দেশের গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এই সাত দফা বাস্তবায়ন অপরিহার্য। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসব দাবি আদায়ে তারা অটল থাকবেন বলে জানিয়েছেন দলীয় শীর্ষ নেতারা। সমাবেশ শেষে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘মানুষ জেগে উঠেছে। এই জাগরণ কেউ থামাতে পারবে না।’

জামায়াতের সাত দফা দাবি
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ও অন্যান্য সময় সংঘটিত সব গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রের সব স্তরে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতকরণ।