মেক্সট বৃত্তি পেয়ে জাপান যাচ্ছেন মাভাবিপ্রবির সম্পা ইসলাম

মাভাবিপ্রবির এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সম্পা ইসলাম
মাভাবিপ্রবির এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সম্পা ইসলাম © সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সম্পা ইসলাম। পড়াশোনায় সাফল্য এসেছে কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য আর সৃষ্টিকর্তার ওপর নির্ভরতার মাধ্যমে, এমনটাই বিশ্বাস করেন তিনি। এবার সে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় জাপানের সরকারি স্কলারশিপ মেক্সট পেয়ে টোকিও ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে মাস্টার্স অধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন সম্পা।

মেক্সট জাপানের সরকারি স্কলারশিপ। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো রকম টিউশন ফি, পরীক্ষার ফি বা অন্যান্য কোনো ফি দিতে হয় না। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যাবতীয় ফি মওকুফ এবং পাবলিক বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি ও অন্যান্য ব্যয়ভার বহন করে দেশটি। মাসিক উপবৃত্তি, বিমানে যাতায়াত খরচসহ নানা সুযোগ-সুবিধা মেলে। 

জাপানে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখার পেছনে প্রধান অনুপ্রেরণা ছিলেন মা-বাবা। এমন তথ্য জানিয়ে সম্পা বলেন, ‘আমার মা-বাবার স্বপ্ন ছিল আমি পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে যাব, নিজের যোগ্যতায় সামনে এগিয়ে যাব। তাদের সে স্বপ্ন বাস্তব করতে তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ছোট একটি রুমে আমাদের তিন বোনকে রেখে বড় করেছেন, কষ্ট করে টাকা জমিয়েছেন।’

সম্পা জানান, স্কলারশিপ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় সহায়তা পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলামের কাছ থেকে, যিনি বর্তমানে নাগাসাকি ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন মেক্সট স্কলারশিপে। তিনি বলেন, ‘৪/১ সেমিস্টার শেষে আমি ভাইকে নক দিই। তিনি আমাকে ধাপে ধাপে গাইড করেছেন। ভাই ছিলেন আমার মেন্টর। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেন। তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’

আরও পড়ুন: ‘ক্যাম্পাসে ছেলেমেয়েদের জীবনের কোনো দাম নাই’, ক্ষোভ প্রকাশ সেই ফুলপরীর

তিনি বলেন, ‘স্কলারশিপ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ছিল, মাত্র দুজন প্রফেসরকে মেইল করার পরই এক প্রফেসর তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দেন। সেখান থেকেই তার স্কলারশিপ নিশ্চিত হই। আমার করা প্রথম মেইলেই স্কলারশিপ হয়ে গেছে, এটা ছিল সত্যিই বিস্ময়কর।’

সম্পার চোখে, সফলতার পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিল নিজের স্বপ্নে অবিচল থাকা এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা। রিসার্চ ফিল্ডে কাজ করার আগ্রহ থেকেই অবসরে গবেষণা কাজ চালিয়ে যান এবং প্রোগ্রামিং শেখেন। ভবিষ্যতে গবেষণা এবং শিক্ষকতা পেশার মাধ্যমে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান বলে জানান তিনি।

উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপে আগ্রহী নতুনদের উদ্দেশ্যে সম্পার পরামর্শ, ‘নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে। কেউ যখন তোমার ওপর আস্থা রাখে না, তখন তাকে ফল দিয়ে দেখাও তুমি পারো। সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রাখো, তিনি তোমার পথ তৈরি করে দেবেন।’

সম্পা ইসলাম বড় হয়েছেন ঢাকার বাসাবোতে। তারা তিন বোন, ভাই নেই। মা-বাবা সমাজ ও পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে নিয়েছেন। সম্পা বর্তমানে এমএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার অ্যাকাডেমিক পথচলা শুরু হয় মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এরপর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ হয়ে পা রাখেন মাভাবিপ্রবিতে।