সহকারী প্রেস সচিব
প্রতিবার গ্যালারিতে ছবিটা দেখি, আর আরও একবার অসহায় ফিল করি
- ২১ জুলাই ২০২৫, ১৭:৫৪
ইরফানের বাবার মুখে কোনো অভিযোগ ছিল না। ছিল না কোনো কান্না বা ক্ষোভের সুর। এমনকি ৪ মিনিটের ওই কনভারসেশন জুড়ে উনি এক লাইনও কথা বলেন নাই। এক-দুই শব্দে আস্তে আস্তে, প্রায় শোনা যায় না এমনভাবে শুধু আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। কণ্ঠে কোনো রাগ নাই, ক্ষোভ নাই, অভিযোগ নাই। বিতৃষ্ণা আছে, অসহায়ত্ব আছে। ৪ মিনিটের ওই কনভারসেশন জুড়ে শুধু নৈঃশব্দ্যই টের পেলাম আমি। ফোন রাখার আগে বললাম, ‘আমি খুব সরি আঙ্কেল।’
এটি জুলাই আন্দোলনে নিহত ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইরফান ভুঁইয়াকে নিয়ে আজ বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেন প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।
তিনি লিখেন, মাত্র কয়েকটি শব্দ দিয়েই শেষ হয়েছিল সেই ফোনকল। তবু ৪ মিনিটের সেই নিরুত্তর সংলাপ আজও ভাসে কানে, কাঁপিয়ে দেয় মন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া প্রাণঘাতী ঘটনার পর সাংবাদিক হিসেবে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়েছিল সুচিস্মিতাকে। তেমনই একদিন, ২৯ জুলাই, ফোনে কথা হয় ইরফানের বাবা আমিনুল ভুঁইয়ার সঙ্গে। পুরো কথোপকথনটি ছিল মাত্র চার মিনিট, কিন্তু স্মৃতিতে দগদগে দাগ ফেলে গেছে সেই নৈঃশব্দ্য।
সুচিস্মিতা লেখেন, ইরফানের বাবা ইউআইইউর একজন স্টাফ ছিলেন। কর্মচারী হিসেবে তিনি সেমিস্টার ফিতে কিছু ছাড় পেতেন, যা তাঁদের মতো নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বড় ছেলে ইরফান ছিল তাঁদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের ভরসা। এসব তথ্য দিয়েছিলেন ইরফানের এক সহপাঠী।
ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, এতখানি অসহায় আমি এই জীবনে খুব কমই ফিল করছি। ফোনালাপের পর ইরফানের একটি ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছিলেন তাঁর বাবা। সেই ছবি এখনো ফোনের গ্যালারিতে রয়ে গেছে। প্রতিবার গ্যালারি খুললেই ছবিটি চোখে পড়ে। আর সেই ছবির চোখে চোখ পড়তেই ফিরে আসে সেই অসহায় চার মিনিট, সেই নিঃশব্দতা।