পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২ জন গ্রেফতার

আহমেদ ফয়সাল ও শামিন মাহফুজ
আহমেদ ফয়সাল ও শামিন মাহফুজ © সংগৃহীত

পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চলতি জুলাই মাসে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেফতারকৃত দুইজন হলেন, আহমেদ ফয়সাল (৩৩) এবং শামিন মাহফুজ (৪৯)।

গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বরত পুলিশ সুপার ব্যারিস্টার মাহফুজুল আলম রাসেল।

তিনি জানান, র্যাব-১১ সোমবার (১৪ জুলাই) শামিন মাহফুজকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে এটিইউর কাছে হস্তান্তর করে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে তোলা হয় এবং এটিইউর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত শামিনের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। অন্যদিকে আহমেদ ফয়সালকে গত ২ জুলাই সাভার থেকে আটক করা হলেও ৫ জুলাই সাভার থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে (২০০৯) একটি মামলা দায়ের করে গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে ফয়সাল কারাগারে আছেন।

জানা গেছে, গত এপ্রিলের শেষের দিকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে পাক সেনাবাহিনীর সাথে টিটিপির হয়ে লড়াই করতে গিয়ে আহমেদ জোবায়ের (২৩) নামে এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত হন। এ নিয়ে গত ১৫ মে প্রথম খবর প্রকাশ করে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে অবস্থান করে আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণ টিটিপির পক্ষে লড়াই করছেন। এরপর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয় এবং পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) সাভারে সন্ধান পায় নিহত জোবায়েরের সফরসঙ্গী আহমেদ ফয়সাল নামের এক তরুণের।

এ বিষয়ে ধারাবাহিক অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত ২ জুলাই আটক হওয়ার আগে ফয়সালের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল দ্য ডিসেন্ট। তখন তিনি টিটিপির সাথে তার সংশ্লিষ্টতা এবং নিহত আহমেদ জোবায়েরের সাথে পাকিস্তান সফরের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে ফয়সাল দাবি করেন, তিনি সংগঠনটির হয়ে কোন অপারেশন বা সক্রিয় কার্যক্রমে অংশ নেননি। টিটিপির সদস্য জোবায়েরের সাথে পাকিস্তানের একটি ক্যাম্পে অবস্থানকালে তার সাথে ফয়সালের একাধিক ছবি সংগ্রহ করেছে সংবাদ মাধ্যমটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তের সাথে জড়িত এসবির একজন কর্মকর্তা জানান, গত ২২ মে ফয়সালকে আটক করে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তবে এটিইউ সেসময় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের না করে তাকে ছেড়ে দেয়।

১৪ জুলাইয়ের একটি গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুয়েল মিঞাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, সেসময় পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে ফয়সালকে আটক করা হয়নি। পরে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে আটক এবং মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আমিনুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

টিটিপি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সাভার থানায় ফয়সালের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে আরও আসামি করা হয়েছে আল ইমরান, রেজাউল করিম আবরার, আসিফ আদনান, জাকারিয়া মাসুদ এবং মোহাম্মাদ সানাফ হাসান নামের ৫ জনকে।

সোমবার (১৪ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক করা শামিন মাহফুজকেও একই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তবে ফয়সাল, আল ইমরান এবং সানাফ হাসান ছাড়া এই মামলার অন্য আসামিদের টিটিপি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ দ্য ডিসেন্ট নিজস্ব সূত্রের মাধ্যমে যাচাই করতে সক্ষম হয়নি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শামিন মাহফুজ ইতিপূর্বে একাধিকবার সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুন মাসে রাজধানীর ডেমরা থেকে তাকে স্ত্রীসহ আটক করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। সেসময় তাকে সিটিটিসি তাকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান হিসেবে দাবি করে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের মারফতে আরও জানা যায়, ইতোপূর্বে ২০১১ সালে বান্দরবানের থানচি থানার একটি মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন। জামিনে মুক্তি পান দুই বছর পর।

২০১৪ সালে তিনি আবারও গ্রেফতার হন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে। হাইকোর্টের আদেশে জামিনে মুক্তি পান ২০১৮ সালে। তখন থেকে ২০২৩ সালে গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সস্ত্রীক নিখোঁজ ছিলেন। ২০২৩ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর শামিন কবে মুক্তি পেলেন এবং পরবর্তীতে তার অবস্থান কোথায় ছিল-- এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে তার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।

সূত্র: দ্য ডিসেন্ট