তিন কারণে এখনো জুনের বেতন পাননি চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারী

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক © ফাইল ছবি

দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় কর্মরত এমপিওভুক্ত প্রায় চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এখনো জুন মাসের বেতন পাননি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলত তিনটি কারণে তাদের বেতন ছাড়ে বিলম্ব হয়েছে। তবে আগামীকাল বুধবার তারা বেতন পাবেন।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে ইএমআইএস সেলের প্রোগ্রামার-৫ মো: জহির উদ্দিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইলেক্ট্রনিক ফান্ডন ট্রান্সফার (ইএফটি) আর বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ইএফটি এক না। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের ইএফটির জন্য প্রতিমাসে অনুমোদন নিতে হয়। তবে সরকারিদের ক্ষেত্রে এ অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। যার কারণে ইএফটিতে বেতন-ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শিক্ষক-কর্মচারীরা এর সুফল পাচ্ছেন না।

ইএমআইএস সেল জানিয়েছে, গত ২৯ জুন বেতনের প্রস্তাব মাউশির মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১০ দিন সেই প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। গত ১০ জুলাই বেতনের জিও জারি হলেও তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় বা এজি অফিসে পাঠানো হয়নি। এখানেও গাফিলতি করা হয়েছে। জিও জারির তিনদিন পর গতকাল সোমবার জুন মাসের বেতনের জিও এজি অফিসে পাঠানো হয়েছে। আজ সন্ধ্যার পর অথবা আগামীকাল বুধবার শিক্ষক-কর্মচারীরা জুন মাসের বেতন পাবেন।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইএমআইএস সেলের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তিনটি কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের জুন মাসের বেতন দিতে বিলম্ব হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কারণটি হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যথাসময়ে বেতনের প্রস্তাব (বিল) পাঠানো হয়নি, যার ফলে পুরো প্রক্রিয়াই ধীরগতিতে এগিয়েছে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা ও সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে বিল অনুমোদনে বিলম্ব হয়েছে। বিশেষ করে বেতনের জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) জারিতে দেরি হয়েছে, যা অর্থ ছাড়ের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে। তৃতীয় কারণটি কাঠামোগত—প্রতিমাসেই নতুন করে বেতনের প্রস্তাব পাঠাতে হয়, যা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া এবং এতে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক ধাপ পার হতে হয়। এ সমস্যা সমাধান না হলে ইএফটির সুবিধা পাবেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা।

জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পান। তবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে ছাড় হয়। এই অর্থ তুলতে শিক্ষকদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হতো।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। পরবর্তী সময়ে গত ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা পেয়েছেন। তবে এখনো তারা জুন মাসের বেতন পাননি। বেতন না পেয়ে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছেন প্রায় চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারী।