জলাবদ্ধতায় বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ, হুমকিতে কোটি টাকার আমদানি

জলাবদ্ধতায় বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ
জলাবদ্ধতায় বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ © টিডিসি

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে ভারী বর্ষণের পর পরই আবারও থমকে গেছে পণ্য খালাস কার্যক্রম। গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে বন্দরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতা, হাঁটু পরিমাণ পানি জমে গেছে বিভিন্ন শেড ও টার্মিনালে। এতে ৯, ১২, ১৫, ১৬ ও ১৮ নম্বর শেডসহ একাধিক স্থানে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে লোড-আনলোড কার্যক্রম। মাঠে পড়ে থাকা পণ্য পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে—ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মালামাল।

বেনাপোল বন্দরের কাঁচা পণ্যের মাঠ, ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল ও শেডগুলোর অনেক জায়গায় এক ফুটের বেশি পানি জমেছে। চলাচলে চরম বিঘ্ন ঘটছে শ্রমিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। বিভিন্ন চালান আটকে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে কয়েক কোটি টাকার পণ্যের গুণগত মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বন্দরের অভ্যন্তরে এমন জলাবদ্ধতা নতুন নয়—প্রায় প্রতিবছরই বৃষ্টির মৌসুমে একই চিত্র দেখা যায়। বছরের পর বছর ধরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাঁটু পানি জমে থাকে। অথচ এর কোনো স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ, এমন অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলের।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক মো. শামিম হোসেন বলেন, ‘জলাবদ্ধতার মূল কারণ রেল বিভাগের অবহেলা। তারা কালভার্ট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাশন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা দ্রুত পাশ্ববর্তী হাওরের সঙ্গে বন্দর এলাকার সংযোগ করে ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।’

তবে বন্দরের শ্রমিক ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিত অবকাঠামো এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব। ৯২৫ হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদ আলী বলেন, “বন্দরের শেডগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। ফলে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার পণ্য পানিতে নষ্ট হয়। কয়েকবার পানি অপসারণে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে মিলে চেষ্টা চালালেও কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।”

একই অভিযোগ করেন বেনাপোল বন্দর আমদানি-রফতানি সমিতির সভাপতি আনোয়ার আলী আনু। তিনি বলেন, ‘যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়, সেই বন্দরে আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার ঘাটতি এক অশুভ সংকেত। সামান্য বৃষ্টি হলেই পণ্যের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ে, ফলে অনেক সময় কাঁচামাল, কাপড়, যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।’

এদিকে, আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায় বন্দর রাজস্ব হারাচ্ছে এবং দুই দেশের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাও চাপে পড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে বন্দরের অব্যবস্থাপনা, অন্যদিকে প্রকৌশলগত অবহেলা—এই দুইয়ের মিলিত চাপে বেনাপোল বন্দর এখন দুর্ভোগ ও ক্ষতির আরেক নাম হয়ে উঠেছে।