‘হয়তো তোমাকে ততটা ভালোবাসতে পারিনি’, ঢাবির সঞ্জুকে নিয়ে শিক্ষকের নির্মম স্বীকারোক্তি
- ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৫:২২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের নবনির্মিত রবীন্দ্র ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন সঞ্জু বরাইক নামে এক শিক্ষার্থী। সোমবার (১৪ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সঞ্জু ছিলেন ঢাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন এক স্ট্যাটাসে সঞ্জুকে স্মরণ করেছেন তার শিক্ষিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন। সেই লেখায় উঠে এসেছে সঞ্জুর অন্তর্মুখী চরিত্র, লড়াকু জীবন এবং নিঃশব্দ যন্ত্রণা।
অধ্যাপক জোবাইদা লেখেন, “সঞ্জু বরাইক আমাদের ছাত্র ছিল। গতকাল আর আজকের ব্যবধানেই সে ‘ছিল’ হয়ে গেল। চা-বাগানে বড় হওয়া সঞ্জুর সঙ্গে পরিচয় প্রথম সেমিস্টার থেকেই। খুব কম কথা বলত। ক্লাসে মাঝেমধ্যে অনুপস্থিত থাকত। একদিন বললাম, ‘ক্লাস ভালো লাগে না?’ লাজুক ভঙ্গিতে বলল, ‘টিউশনি করে ক্লান্ত হয়ে যাই, ম্যাডাম।’”
সঞ্জুর সংগ্রামী জীবন নিয়ে তিনি আরও বলেন, “একদিন জানাল, তার টিউশনি চলে গেছে—কারণ, সে ভালো বাংলা বলতে পারে না। তার মাতৃভাষা তো বাংলা নয়। কেন আমরা তার কাছ থেকে বাংলা ভাষার শুদ্ধতা আশা করব? এক ভিন্ন ভাষাভাষী অঞ্চল থেকে সে এসেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে।”
মাঠ গবেষণায় যাওয়ার সময় আর্থিক সংকটের কথা অনেকে বললেও, সঞ্জু কিছু বলেনি। অধ্যাপক জোবাইদা লেখেন, “ওদের ব্যাচের কোর্স কো-অর্ডিনেটর ছিলাম। যেসব শিক্ষার্থী আর্থিক সমস্যার কথা জানিয়েছিল, তাদের তালিকায় সঞ্জু ছিল না। পরে সিআর জানাল, ওদের মধ্যে সবচেয়ে সংকটে আছে সঞ্জু। কিন্তু সঞ্জু সেটা প্রকাশ করতে চায়নি।”
সঞ্জুর সেই লাজুক স্বভাব, নীরব হাসি আজও শিক্ষকটির মনে গেঁথে আছে—“ক্লাসে দেখা হলে শুধু মৃদু হাসি। যখন বলতাম, ‘সব প্রশ্নের উত্তর লেখ না কেন, সঞ্জু?’ তখনো হাসত—‘ওটুকুতেই হবে, ম্যাডাম।’ হয়তো সেই ‘ওটুকু’তেই সে খুশি থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ সেই ‘ওটুকু’ই তার হাত ফসকে পড়ে গিয়েছিল। আর সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি জীবনের তাগাদায়।”
স্ট্যাটাসের শেষদিকে এসে অধ্যাপক জোবাইদার কণ্ঠে জমা হয় এক অসহায় আত্মদায়িত্ব ও ব্যথা: “শুধু আফসোস করতেই পারছি, সঞ্জু—তোমার সেই ‘ওটুকু’ নড়ে গিয়েছিল কীভাবে? কেন আমরা সেটা ফিরিয়ে দিতে পারলাম না? হয়তো তোমাকে ততটা ভালোবাসতে পারিনি, যতটা তোমার প্রয়োজন ছিল।”