মনে মনে সুরা পড়লে কি নামাজ হবে?

নামাজে সিজদাহরত অবস্থায়
নামাজে সিজদাহরত অবস্থায় © সংগৃহীত

নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ এবং প্রতিদিনের অপরিহার্য ইবাদত। নামাজের প্রতি রুকু ও শর্ত পালন করা যেমন ফরজ, তেমনি তিলাওয়াত বা ‘কিরাত’ পড়াও নামাজের একটি অপরিহার্য অংশ। তবে অনেকেই প্রশ্ন করেন, নামাজে সুরা বা আয়াত ‘মনে মনে’ অর্থাৎ ঠোঁট নাড়ানো বা আওয়াজ ছাড়া পড়লে কি নামাজ আদায় হবে?

শরিয়তের দৃষ্টিতে কিরাত কীভাবে পড়তে হয়?
ইসলামি স্কলারদের সর্বসম্মত অভিমত হলো—নামাজে কিরাত উচ্চারণ করে পড়া ওয়াজিব, অর্থাৎ জিহ্বা ও ঠোঁট নড়াতে হবে এবং নিজ কানে শোনা যাবে এমনভাবে পড়তে হবে। একে ফিকহের ভাষায় বলা হয়—‘আত-তিলাওয়াতু বিস্‌ সাম্‌’। অর্থাৎ কিরাত এমনভাবে পড়তে হবে যেন নিজের কানে শুনতে পান, অন্তত নীরব পরিবেশে হলে তা সম্ভব হয়।

শুধু মনে মনে পড়লে?
শাফিয়ি, হানাফি, মালিকি ও হাম্বলি—প্রায় সব মাজহাবের আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যদি কেউ মুখে কিছু উচ্চারণ না করে কেবল অন্তরে (মানে ‘মনে মনে’) সুরা পড়ে, তাহলে সে নামাজে কিরাত আদায় করেনি। কারণ, চিন্তা বা কল্পনা করা পড়া নয়। তাই নামাজও সহিহ হবে না।

সম্প্রতি জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ’র এক ভিডিওতে দেখা যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন মনে মনে সুরা পড়লে নামাজ হবে না।

এ বিষয়ে হাদিস ও ফিকহগ্রন্থের ভিত্তি
হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে মুখ নেড়েই কিরাত পড়তেন। (বুখারি)
ইমাম কাসানির ‘বাদায়েউস সানায়ি’ গ্রন্থে বলা হয়েছে: যদি কেউ শুধু অন্তরে কিরাত পড়ে, মুখে না পড়ে, তবে তার নামাজ সহিহ হবে না।

তবে নীরবে পড়া মানে কি একেবারে শব্দহীন?
না। নীরবে পড়া বলতে বোঝানো হয়—এমনভাবে পড়া, যাতে নিজে শুনতে পারেন, কিন্তু পাশের কেউ না শুনতে পান। একে ‘সিররি কিরাত’ বলা হয়। যেমন যোহর ও আসরের নামাজে ইমাম নীরবে কিরাত পড়েন। তবে এই নীরবও আসলে একেবারে মনে মনে নয়; জিহ্বা ও ঠোঁট নাড়িয়ে পড়া হয়।

যখন মনে মনে পড়া যাবে
যদি কেউ অসুস্থ হন, কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, তখন ভিন্ন অবস্থা। শরিয়তের দৃষ্টিতে তখন উক্ত ব্যক্তি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পড়বেন। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় কেবল মনে মনে কিরাত পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে না।

নামাজের কিরাত মনে মনে পড়া জায়েজ নয়। কিরাত মুখে উচ্চারণ করতে হবে, এমনকি একাকী নামাজে হলেও। ঠোঁট নাড়িয়ে, নিজের কানে শোনা যাবে এমন আওয়াজে না পড়লে নামাজ শুদ্ধ হয় না। তাই সচেতন মুসল্লিদের উচিত—নামাজে সুরা পড়ার সময় ঠোঁট ও জিহ্বা ব্যবহার করা এবং সম্ভব হলে নিজ কানে শোনার মতো শব্দে তিলাওয়াত করা।