চাহিদা কম, রিজার্ভ বাড়ায় কমছে ডলারের দাম
- ১৪ জুলাই ২০২৫, ১১:০৮
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এবং রপ্তানি আয় বেড়েছে, যার ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। অন্যদিকে, কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির মতো পণ্যের আমদানির ব্যয় তেমন না বাড়ায় ডলারের ওপর চাপ কমেছে এবং দাম নিম্নমুখী হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রোববার (১২ জুলাই) ব্যাংকগুলো ডলার কেনা-বেচা হয়েছে ১২০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ২০ পয়সা দরে। অথচ ২ জুলাই মাসের শুরুতে এই দর ছিল ১২২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ৮৫ পয়সা পর্যন্ত। এরপর টানা দরপতনে ১৩ জুলাই ডলার ১২০ টাকায় নেমে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, গত কয়েক মাসে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ বেড়েছে, যা বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়েছে। এর পাশাপাশি, আইএমএফ, এডিবি, জাইকা ও এআইআইবি থেকে আসা অর্থ সহায়তা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের চলতি হিসাবের ঘাটতি কমেছে এবং ডলারের দরও কমতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম রেকর্ড ভেঙে ১২৮ টাকায় ওঠে মাত্র দুই কার্যদিবসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হলেও, ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক দামে রেমিট্যান্স কেনার অভিযোগ ওঠে এবং তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। সে সময় গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, কিছু ব্যাংকের ভুল নীতির কারণে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল এবং বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ডলারের দাম ইচ্ছেমতো বাড়াচ্ছিল, যা বরদাস্ত করা হবে না। তিনি আরও বলেন, ডলারের দাম ঠিক হবে বাংলাদেশের বাজারেই।
চলতি বছরের ১৫ মে আইএমএফ-এর সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে, যেখানে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই দর ঠিক করে। অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন এতে ডলারের দাম বেড়ে যেতে পারে, তবে বাস্তবে দেখা গেছে দাম কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৭ কোটি ডলার এবং আমদানি ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ২৫ কোটি ডলার। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ১ হাজার ৯৩৮ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ২২ কোটি ডলার। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ৪.১৭ শতাংশ কমেছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের দিক থেকেও রেকর্ড হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স ছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার। এই অঙ্ক বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স প্রবাহের এই উত্থান ডলারের বাজারে স্বস্তি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এনেছে।
এ ছাড়া, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১.৬৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালের জুনে রিজার্ভ ছিল ৩১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের শেষের তুলনায় এবার প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে, কারণ ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ছিল ২৬.৭১ বিলিয়ন ডলার।