ভেসাল জাল ও অবহেলায় মৃতপ্রায় কপোতাক্ষ, হুমকিতে পরিবেশ ও জনজীবন

কচুরিপানায় ঢেকে আছে কপোতাক্ষ নদ
কচুরিপানায় ঢেকে আছে কপোতাক্ষ নদ © টিডিসি

একসময় প্রবল স্রোতের কপোতাক্ষ নদ এখন যেন সবুজ কচুরিপানার স্তূপে ঢেকে থাকা একটি স্থবির জলাধার। যশোরের ঐতিহ্যবাহী এই নদের জীবনপ্রবাহ থমকে গেছে অবৈধ দখল, দূষণ ও কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততায়। ঝিকরগাছা থেকে বাঁকড়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটারজুড়ে কপোতাক্ষ নদ যেন হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিক গতি ও প্রাণচাঞ্চল্য।

স্থানীয়দের ভাষ্য, নদের এ বিপর্যয়ের জন্য মূলত দায়ী অবৈধ ভেসাল জাল। নদীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বাঁশ, দড়ি ও কচুরিপানা দিয়ে জলধারা আটকে মাছ ধরার ফাঁদ পেতেছেন জেলেরা। এতে যেমন পানিপ্রবাহ থেমে গেছে, তেমনি নদীর বুকজুড়ে জমেছে আবর্জনা ও জলজ উদ্ভিদ।

নদের বুকজুড়ে জমে থাকা কচুরিপানার স্তূপ এখন চারটি উপজেলার—ঝিকরগাছা, চৌগাছা, মণিরামপুর ও কেশবপুরের মানুষের জীবনে জলাবদ্ধতার নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে। অল্প বৃষ্টিতেই নিচু এলাকার ঘরে পানি ঢুকছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজমি ও পরিবেশ।

স্থানীয় সবুর মোল্লা বলেন, প্রশাসন অভিযান চালাতে এলেও জেলেরা পরস্পরের ওপর দোষ চাপিয়ে এড়িয়ে যায়। কার্যত কোনো পরিবর্তন আসে না।

রঘুনাথনগর কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাব আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে কপোতাক্ষ তার নাব্যতা পুরোপুরি হারাবে। আর সেটা হলে পুরো অঞ্চলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা তৈরি হবে, যা দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভোগ ডেকে আনবে।

আরও পড়ুন: আমরাই প্রথম অফিসিয়ালি পিআর সিস্টেম চালুর দাবি করেছিলাম: ববি হাজ্জাজ

ঝিকরগাছা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নানু রেজা বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চায়না দুয়ারি, কোমরজাল, পাটা জাল ও ভেসাল জালের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। কিন্তু প্রতিবারই জেলেরা নতুন কৌশলে আবারও জাল স্থাপন করে।’

এদিকে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভুপালী সরকার জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে জানানো হয়েছে। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জি বলেন, ‘আমরা কচুরিপানা অপসারণে দ্রুত প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দের চেষ্টা করছি। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।’

নদ ঘিরে কৃষিকাজ, মাছ ধরা, পরিবহন ও জীববৈচিত্র্য—সবকিছুর ওপরই পড়ছে এই দখল-দূষণের প্রভাব। স্থানীয় ইব্রাহীম হোসেন সরদার বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে আর বেশি দিন লাগবে না, আমাদের ঘরের ভেতরেই পানি উঠে যাবে।’

আরও পড়ুন: ১৫ জুলাই বন্ধ থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা

স্থানীয়দের মতে, প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি একযোগে ও আন্তরিকভাবে ব্যবস্থা নেয়। তবে কপোতাক্ষ আবারও তার গতি ফিরে পেতে পারে। কপোতাক্ষ কেবল একটি নদ নয়, এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ, কৃষি ও জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এ নদের সঙ্গে হারিয়ে যেতে পারে একটি অঞ্চলের স্বপ্ন।