মনোনয়ন যুদ্ধে লড়াই: বিএনপির ৪ ও জামায়াতের ১ প্রার্থী

জামায়াতের এক প্রার্থী ও বিএনপির তিন প্রার্থী
জামায়াতের এক প্রার্থী ও বিএনপির তিন প্রার্থী © টিডিসি ফটো

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যশোর-১ (শার্শা) আসনে রাজনীতির মাঠে বাড়ছে উত্তাপ। তফসিল ঘোষণার আগেই জমে উঠেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা। এই আসনে আওয়ামী লীগ দৃশ্যত অনুপস্থিত থাকায় নির্বাচনী প্রতিযোগিতা মূলত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে অন্তত চারজন নেতা মাঠে সক্রিয় থাকলেও জামায়াতের রয়েছেন একজন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান জহির। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দুঃসময়ে দলের পাশে থাকা এবং তৃণমূলের শক্তিশালী সংগঠন তাকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে রেখেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত।

নাভারণ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতির মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি, পরে উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি, এক-এগারোর দুঃসময়ে বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ২০০৮ সালে সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান সভাপতি হিসেবে দল পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি শার্শা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দুইবার নির্বাচিত হন।

রাজপথের টানা সাড়ে ১৫ বছরের সক্রিয়তা, ৪৪টি মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও দলের পাশে থাকা, এমনকি কারাবন্দি অবস্থায় মেয়ের মৃত্যু ও বাবার মৃত্যুশোক সয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকা—সব মিলিয়ে তাকে তৃণমূলের কাছে একজন নিবেদিত প্রাণ নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়।

তিনি বলেন, ‘আমি কখনো পিছিয়ে যাইনি। সংকটে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি, মানুষের জানাজায় থেকেছি, মামলা-হামলা উপেক্ষা করে রাজপথে ছিলাম। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে বিজয়ী করবে।’

২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়ন তালিকায় থাকলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি তিনি। তবে এবার তৃণমূলের জোরালো সমর্থন তার পক্ষে কাজ করবে বলে মনে করছেন তিনি।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন যশোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ পেয়ে নির্বাচন করেন। যদিও সেই নির্বাচনে আ.লীগের প্রার্থী তৎকালীন জোর করে কেন্দ্র দখল করে বিজয়ী হয়েছিলো।

মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, ‘এর আগেও কয়েকবার মনোনয়ন পেয়েছি। ২০১৮ সালেও পেয়েছিলাম। আগামীতে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী, সবাই যোগ্য আমি মনে করি।তারপরও এর আগে বিএনপি যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল; বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমার একটি বড় অবস্থান ছিল। এ কারণে অনেক কাজ করতে পেরেছি। চাকরিতে সহযোগিতা করেছি নিঃস্বার্থভাবে এবং এলাকার উন্নয়নের কাজও করেছি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার ফলে রাস্তাঘাটে, স্কুল, মাদ্রাসার বরাদ্দ দিয়ে উন্নয়ন করেছি। যার কারণে মানুষ এটা মনে রেখেছে বলে আমি মনে করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেহেতু সীমান্তবর্তী এলাকা, আমাদের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা আছে। এগুলো ইনশাআল্লাহ আমি সমাজের সবাইকে এক সাথে নিয়ে মোকাবেলা করব এবং শার্শার উন্নয়নে কাজ করব। আমাদের এখানে একটি বড় সম্পদ বেনাপোল বন্দর। এটির উন্নয়নে আমি কাজ করব। এ ছাড়া বিগত সরকারের আমলে বিএনপির অনেক যোগ্য কর্মীদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি মনে করি চাকরি পাওয়াটা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। আগামীতে দলবাজি না করে যোগ্য সবাইকে চাকরির সু-ব্যবস্থা করব বলে।’

মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুজ্জামান লিটন এবং দলের প্রধান উপদেষ্টা খায়রুজ্জামান মধু। খায়রুজ্জামান মধু বলেন, ‘বিএনপির শুরু থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত। কখনো দল পরিবর্তন করিনি। তৃণমূলের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আমি শার্শা উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম। পরে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি দ্বায়িত্ব পালন করেছি। আমার নামে ঢাকায় খুলনায় রাজনৈতিক মামলা আছে। দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দলের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি। মাঠ পর্যায়ে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। তাই সকল দিক বিবেচনা করে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাব বলে আশা করছি।’

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে একক প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান। ২০০৮ সালের জোট ভিত্তিক নির্বাচনে তিনি মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন। তিনি জামায়াতের প্রার্থী হলেও তার সর্বদলীয় জনপ্রিয়তা রয়েছে এলাকায়। 

মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত শার্শা গড়তে চাই। বেনাপোল বন্দরকে দেশ উন্নয়নের সোপান করে তুলতে চাই। মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে চাই। দলমত ও শ্রেণি নির্বিশেষে সকলের মধ্যে সততা ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান ও পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে উপজেলার শিশু ও তরুণদের চরিত্রবান, যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করব। খাল,বিল ও বাওড়গুলো দখলমুক্ত করে দুস্থ ও জনসাধারণের কল্যাণে কাজে লাগতে চাই।’

বর্তমানে যশোর-১ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৬ জন, নারী ১ লাখ ৪৭ হাজার ১১৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ২ জন।

এই আসনে আওয়ামী লীগ ইতিহাসে ৭ বার, বিএনপি ৩ বার, জামায়াত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ১ বার করে জয়ী হয়েছে। তবে জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় শার্শায় আওয়ামী লীগ কার্যত অনুপস্থিত, ফলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।