জামায়াতের সঙ্গে জোটের সুযোগ নেই, তবে এনসিপির জন্য আলোচনার দরজা খোলা: সালাহউদ্দিন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ © সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আর কোনো জোট গঠনের সম্ভাবনা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে এখনো আলোচনা চালু আছে এবং তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সে আলোচনা চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জামায়াত ইসলামীকে নিয়ে নির্বাচনি জোটের কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না। অতীতে কৌশলগত কারণে আমরা জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছি, কিন্তু এবার তাদের সঙ্গে জোট গঠনের প্রয়োজন অনুভব করছি না।’

তিনি আরও বলেন, বিএনপি এখন সে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট ও জাতীয় সরকার গঠনে মনোযোগী, যারা আন্দোলনে একযোগে সক্রিয় থেকেছে এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। ‘এখন এর বাইরে কিছু ভাবা হচ্ছে না,’—বলেছেন সালাহউদ্দিন।

তবে এনসিপির সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে সম্ভাবনা উড়িয়ে না দিয়ে তিনি জানান, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক জোট নিয়ে আলোচনা চলবে। কী হয় তা সময়ই বলে দেবে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার অগ্রগতির বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই আলোচনা অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যেই আলোচনা শেষ হওয়া উচিত ছিল। আলোচনা আর বেশি দিন চলা উচিত নয়। এখন একটা সারসংক্ষেপ ও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দরকার।’

তিনি দাবি করেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যত পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন কেবল সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ রায়ের অপেক্ষা। আমরা আশা করি, আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনে ইতিবাচক রায় দেবে।’

বাংলাদেশের জনগণ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন চায় উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এই কাঠামোর রূপ কিংবা সাবেক প্রধান বিচারপতিকেই প্রধান উপদেষ্টা রাখার বিষয়টি নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে। এই বিষয়ে বিকল্প নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। বিএনপিসহ অন্যান্য দল এবং সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব দেবে। যদি আরও ভালো কোনো বিকল্পে একমত না হওয়া যায়, তবে বর্তমান কাঠামোই বহাল থাকবে।’

এছাড়া আসন্ন নির্বাচনে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation—PR) ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে এই ব্যবস্থার জন্য উপযোগী রাজনৈতিক, সামাজিক ও নির্বাচন সংস্কৃতি নেই। পিআর ব্যবস্থায় ভোটাররা সরাসরি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, ভোটদানে নিরুৎসাহিত হন এবং সংসদে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’

তার ভাষায়, ‘আমাদের ভোটাররা তাদের পরিচিত ও স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে পছন্দ করেন। কিন্তু পিআর ব্যবস্থায় এমনও হতে পারে যে, একটি এলাকায় কোনো দল বেশি ভোট পেলেও অন্য এলাকার কাউকে নির্বাচিত করা হয়। এটি জনগণের রায়কে প্রতিফলিত করে না, বরং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়।’

পিআর পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য অসুবিধা তৈরি হবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তার মতে, ‘কেউ যদি খুব জনপ্রিয়ও হন, কিন্তু কোনো দলে না থাকেন, তাহলে তিনি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন না। এটি অন্যায় এবং অগণতান্ত্রিক।’

সালাহউদ্দিন মনে করেন, পিআর ব্যবস্থার সুবিধাভোগী মূলত ছোট রাজনৈতিক দলগুলো, যারা তুলনামূলকভাবে কম ভোট পেয়েও বেশি আসন পেতে চায়। কিন্তু এর ফলে দুর্বল জোট সরকার গঠিত হয় এবং দেশে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে ওঠে না। ‘বাংলাদেশে এমন একটি রাজনৈতিক কাঠামো দরকার, যেখানে জনগণ সরাসরি প্রার্থীকে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। বাংলাদেশ পিআর ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত নয়,’—জানান তিনি।

পিআর পদ্ধতির বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন কোনো অবস্থাতেই বিএনপি মেনে নেবে না।’

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংস্কার, বিচার বা পিআর চেয়ে নানা দাবি তুলছে—এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ সংস্কার চায়, কেউ বলছে বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়, কেউ পিআর চায়। এসব বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী, সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হবে। কথা বলার অধিকার সবাই রাখে, তবে সেসব বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্মান করি এবং তাদের জন্য শুভকামনা রাখি। কিন্তু প্রকৃত রাজনৈতিক ওজন আসে জনসমর্থন থেকে। ছোট ছোট কিছু দল বড় বড় কথা বললেও তারা খুব অল্পসংখ্যক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। রাজনীতিতে জনমতের মূল্য সবচেয়ে বেশি।’

জোটসঙ্গীদের মধ্যে মতপার্থক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি দরকষাকষির কৌশলের অংশ হতে পারে, যেমন ধরুন আসন ভাগাভাগি।’

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, আমার মতে, আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তারা বহু আগেই তাদের আদর্শ ও চরিত্র হারিয়েছে। তারা এখন একটি অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী শক্তিতে, এক ধরনের মাফিয়া সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ১৯৭৫ সালের আগ থেকে আজ পর্যন্ত তাদের ইতিহাসে কখনো গণতন্ত্র চর্চা হয়নি। গণতন্ত্র তাদের রক্তে নেই।