কান্না নয়, লড়াই বেছে নিয়েছিল আজিজুল: ফল জিপিএ-৫
- ১১ জুলাই ২০২৫, ১৮:৪৪
ভোরে ঘুম ভেঙে হাঁড়িতে চাল ধোয়া, নিজের জন্য ভাত-তরকারি রান্না, তারপর স্কুলব্যাগ কাঁধে করে মাদ্রাসার পথ ধরা। এটাই ছিল জামালপুরের চিনাডুলী গ্রামের কিশোর আজিজুল ইসলামের প্রতিদিনের রুটিন।
ছুটির পর বাজারে যাওয়া, আবার রাতের খাবার রান্না, তারপর পড়ার টেবিলে বসা। বাবা-মা কর্মজীবনের তাগিদে দূরে, দাদি মারা গেছেন বহু আগেই, আজিজুল একা। এই নিঃসঙ্গ জীবনের মাঝেও সে থামেনি। দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে আজিজুল প্রমাণ করেছে, সংকট নয়, সাহস আর দায়বোধই মানুষের সাফল্যের আসল চাবিকাঠি।
জামালপুরের চিনাডুলী ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মো. আজিজুল ইসলাম এ বছর দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছেন। আজিজুলের বাবা মো. শুকুর আলী ও মা আমেনা বেগম বিগত ৯ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। সংসারের দুঃখ-দুর্দশা কাটাতে তারা কর্মজীবনে দূরে চলে গেলেও ছেলে আজিজুল থেকে যায় জামালপুরের গ্রামে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় একমাত্র দাদিও মারা যান। তখন থেকেই সে একা-একাই রান্না করে, একাই বাজার করে, আর নিজেই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যায়।
আজিজুল বলেন,বাবা-মা দূরে থাকে, দাদি মারা যাওয়ার পর আমি একদম একা হয়ে যাই। সব নিজের হাতে করতে হয়েছে। কষ্ট হয়েছে, কিন্তু হাল ছাড়িনি। কারণ আমি জানতাম, আমার পড়ালেখা থেমে গেলে বাবা-মার সব পরিশ্রম বৃথা যাবে।
তার এমন পরিস্থিতি দেখে পাশে দাঁড়ান মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, আজিজুল খুব কষ্ট করে চলেছে। একা থাকা বাচ্চার জন্য এটা সহজ না। আমি মাঝেমধ্যে ওকে আমার বাড়িতে এনে খাওয়াতাম। আর ও ছিল খুব মনোযোগী, সব সময় পড়ার চেষ্টা করত।
আজিজুলের বাবা শুকুর আলী জানান,ছেলের সাফল্যে গর্বে বুক ভরে গেছে। কষ্ট করে টাকা পাঠিয়েছি, ও যেভাবে একা একা এত দূর এসেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তার মা আমেনা বেগম বলেন, সন্তান আমাদের না দেখেই বড় হয়েছে, তবুও সে কখনও অভিযোগ করেনি। আজ ওর ফল দেখে মনে হচ্ছে, আমরা সার্থক।
আজিজুল ইসলাম একাকীত্ব আর দারিদ্র্য জয় করে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস জুগিয়েছে। তার স্বপ্ন মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা।