ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

না জানিয়েই আওয়ামীপন্থী ৭১ শিক্ষকের বিবৃতিতে নাম, প্রতিবাদ জানাল ৬ শিক্ষক

অপরাজেয় বাংলা, ঢাবি
অপরাজেয় বাংলা, ঢাবি © ফাইল ফটো

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মব সন্ত্রাস’ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আওয়ামী লীগের সমর্থক শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম নীল দলের কিছু শিক্ষক। গতকাল বুধবার (৯ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক’ ব্যানারে ওই বিবৃতিতে তারা মব সন্ত্রাস নিরসনে দ্রুত কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। 

বিবৃতিটিতে দাবি করা হয়েছে, এতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ জন শিক্ষক। তবে এরমধ্যে অন্তত ৬ জন শিক্ষক নিশ্চিত করেছেন, তারা এই বিবৃতি বিষয়ে কিছুই জানেন না। ফলে সেখানে তাদের স্বাক্ষর করার কোনো প্রশ্নই আসে না।

আরও পড়ুন: মব ও মানবাধিকার ইস্যুতে উদ্বেগ জানিয়ে ঢাবির ‘আওয়ামীপন্থী’ ৭১ শিক্ষকের বিবৃতি

আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এই ৬ জন শিক্ষক লিখিতভাবে তাদের অবস্থানের কথা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন। তারা হলেন-আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আরশাদুল হাসান, ড. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ও আহমদ হাসান চৌধুরী এবং একই বিভাগের প্রভাষক ইমরান হোসাইন ও নাঈমুল ইসলাম। তাছাড়া সামশাদ নওরীন নামে আরেক শিক্ষক আলাদাভাবে তার অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।

আরবি বিভাগের ৫ জন শিক্ষক জানান, বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ জন শিক্ষক এতে স্বাক্ষর করেছেন বলা হয়েছে। এতে আমাদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে (যদিও উল্লিখিত নামসমূহে যথেষ্ট অসংগতি রয়েছে)। আমরা বলতে চাই যে, এ বিষয়ে কেউ আমাদের সম্মতি নেয়নি, আমরা কোনরূপ স্বাক্ষরও করিনি। তাই এই বিবৃতির সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা মনে করি, পূর্ব সম্মতি না নিয়ে কারো নাম বা স্বাক্ষর ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। অতএব, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সামশাদ নওরীন বলেন, বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী হিসেবে আমার নাম দেওয়া হয়েছে। তবে আমি স্বাক্ষরের সময় অনুপস্থিত ছিলাম।

প্রসঙ্গত, গতকাল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে ‘‘মব ও মানবাধিকার ইস্যুতে উদ্বেগ জানিয়ে ঢাবির ‘আওয়ামীপন্থী’ ৭১ শিক্ষকের বিবৃতি’’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বিগত কয়েক মাস থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মব সন্ত্রাস’ থাবা বিস্তার করেছে এবং ক্রমশ তা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। এতে দেশের মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। মবাক্রান্ত মানুষেরা শুধু যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হচ্ছেন তাই নয়, বরং গণপিটুনির শিকার হয়ে অনেকেই ইতোমধ্যে মারা গেছেন, নারীরা তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন; এমনকি মবের শিকার হয়ে অনেক অবুঝ শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনও বিপর্যস্ত হয়েছে। 

বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আইন-আদালত, গণমাধ্যম, ব্যবসা-কেন্দ্র, আবাসিক ভবন, ঐতিহাসিক স্থাপনা, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন থেকে শুরু করে সামাজিক অনুষ্ঠানাদি পর্যন্ত মব সন্ত্রাসের কালো থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী 'মব' নিরসনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বললেও বাস্তবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দৃশ্যমান হচ্ছে না এবং আগ্রাসী মবকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

‘‘উপরন্তু, কোনো কোনো দায়িত্বশীল মহল কর্তৃক ‘মব’কে ‘প্রেসার গ্রুপ’ বলে সংজ্ঞায়িত করায় পর্যায়ক্রমে ‘মব সন্ত্রাস’ অনাকাঙিক্ষতভাবে মব সংস্কৃতির রূপ পরিগ্রহ করছে এবং মব সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া ও বেসামাল হচ্ছে। দেশের মুক্তবুদ্ধি চর্চার সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় খুবই উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও বেদনাহত।’’