জিপিএ-৫ না পেয়ে থেমে যাইনি, দাঁড়াতে শিখেছি

জুয়াইরিয়া রাফা
জুয়াইরিয়া রাফা © টিডিসি ফটো

ছাত্রজীবনে সবচেয়ে প্রত্যাশিত মুহূর্তগুলোর একটি হলো পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া। কিন্তু সবাই কি পায়? না পেলেই কি সব শেষ? অনেকের জন্য এটি হতে পারে জীবনের প্রথম বড় ধাক্কা। কেউ কেউ থেমে যায়, কেউ আবার সেই ব্যর্থতার ভিত গড়েই নির্মাণ করে সাফল্যের ভবিষ্যৎ। তেমনই একজন মেধাবী ও দৃঢ়চেতা শিক্ষার্থী হলেন— জুয়াইরিয়া রাফা। এসএসসিতে ৪.৮৯ পেয়েও থেমে না থেকে আত্মবিশ্বাস গড়া, স্কিল তৈরি এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি পৌঁছে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি এডওয়ার্ডসভিল- এ (এসআইইউই)। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রশ্নে রাফা শেয়ার করেছেন তার নিজের জীবনের উত্থান-পতন, মানসিক সংগ্রাম, প্রস্তুতি আর এগিয়ে যাওয়ার গল্প।

এসএসসি পরীক্ষায় আপনার ফলাফল কেমন হয়েছিল? তখন কী অনুভব করেছিলেন?
জিপিএ ফাইভ পাওয়াটা প্রতিটি স্টুডেন্টেরই স্বপ্ন, কেননা ছাত্রজীবনের সবচেয়ে প্রথম এবং বড় একটি ধাপ এটি। আমার নিজেরও স্বপ্ন ছিল জিপিএ ফাইভ পাওয়া। যদিও খুব কাছে গিয়ে আমার সেই জার্নিটা থেমে যায়। বাস্তবে আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না এটার জন্য। এটা অনেকটাই ছিল মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো সেই সময়টায়।

জিপিএ ৫ না পাওয়ার কারণে কী ধরনের মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন চারপাশ থেকে?
সবচেয়ে বড় বুলিংয়ের শিকার হই আশেপাশের মানুষের থেকে। কখনো সেটা প্রত্যক্ষ, কখনো পরোক্ষভাবে। আব্বু নিজেও ঠিকমতো কথা বলেনি কয়েকদিন। যদিও আম্মু সবসময় সাপোর্টিভ ছিলেন। কী অসহনীয় দিন ছিল সেগুলো বলার মতো না।

তরুণ বয়সে এমন মানসিক চাপ কীভাবে সামলেছেন?
চাপ মোকাবেলা করাটা মোটেও সহজ ছিল না, বিশেষ করে একজন উঠতি বয়সী মেয়ের জন্য। বাস্তবতা খুব কমই বুঝতাম, ইমোশনটা বেশি কাজ করতো। অনেক ট্রমাটাইজড লাগতো নিজেকে। নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম সবসময়— “এটাই শেষ নয়”।

এরপর কীভাবে নিজেকে বদলানোর সুযোগ তৈরি করলেন?
পরিবর্তনের সুযোগটা নিজের দৃঢ় মনোবল দিয়েই তৈরি করতে হয়েছে। টার্গেট ছিল এইচএসসিতে প্রত্যাশিত রেজাল্ট করা এবং উচ্চশিক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। আলহামদুলিল্লাহ, আমি তা পেরেছি। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষায়ও সফল হয়েছি।

স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও প্রস্তুতি কেমন ছিল?
প্রথমেই নিজের অ্যাকাডেমিক রেজাল্টে ফোকাস করেছি। পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। ইন্টারভিউ ফোবিয়া ছিল আমার আগে থেকেই। সেই ভয় কাটাতে এবং কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে যশোর শহরের একটি টেলিকমিউনিকেশন সেন্টারে পার্টটাইম জবের জন্য ইন্টারভিউ দেই। সফলও হই। হোম অফিসের সুযোগ কাজে লাগাই। এরপর আইএলটিএস-এর জন্য প্রিপারেশন নিই এবং ৬.৫ স্কোর করি। সবকিছু মিলিয়ে পার্শিয়াল স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব হয়।

এখন আপনি জিপিএ বিষয়ে কীভাবে ভাবেন?
প্রথমে ভাবতাম জিপিএ ফাইভই সব। কিন্তু সময়ের সাথে বুঝেছি এটা জীবনের একটা অংশ ছিল শুধু। এটাতে আপনি সফল হতে পারেন, আবার খানিকটা আশাহতও হতে পারেন। এর মানে এই না যে- সব শেষ। এখান থেকেই শুরু। কখনো আশাহত হওয়া যাবে না। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার বার্তা কী?
আমার বার্তা সবসময় একই—কখনো হাল ছাড়া যাবে না। জীবনে অনেক সুযোগ আছে। আগামীকাল কী হবে তা কেউ জানে না। আমার পরিচিত অনেকেই আছেন যারা মাধ্যমিক/উচ্চমাধ্যমিকে প্রত্যাশিত রেজাল্ট না পেয়েও যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে আমেরিকায় ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তাই লক্ষ্য ঠিক রেখে, সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়া জরুরি।

আপনার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য কী?
ভালো এবং প্রত্যাশিত রেজাল্ট করে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা আমার প্রথম লক্ষ্য। এরপর আইটি-তে মাস্টার্স করতে চাই। পাশাপাশি নিজের ফিল্ডে স্কিল বাড়াতে চাই। সেটা অনলাইন কিংবা প্র্যাক্টিকাল কোর্সের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
সবসময় নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখুন এবং সেই অনুযায়ী সময়কে কাজে লাগান। বিফলতা আসতেই পারে, কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। আমরা কেউই পারফেক্ট নই, তবে নিজের দুর্বলতা যেন আমরা শক্ত প্রোফাইল দিয়ে ঢেকে ফেলতে পারি। “ইফ ইউ ক্যান ড্রিম ইট, ইউ ক্যান ‍ডু ইট।”