১৮ জুলাই ‘লীগ বহিষ্কার’ কর্মসূচি পালনের প্রস্তাব ববি শিক্ষার্থীদের

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় লোগো
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় লোগো © টিডিসি সম্পাদিত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলার এক বছর পেরোলেও হয়নি বিচার। এখনো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এরই প্রেক্ষিতে আগামী ১৮ জুলাই ‘লীগ বহিষ্কার’ কর্মসূচি পালনের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।

বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল ৪টায় উপাচার্যের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে এ প্রস্তাব দেন ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ রায়।

এদিকে জুলাই মাসব্যাপী ১৩টি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জুলাই ছাত্র জনতার বিজয় র‍্যালি ও বিজয় ভোজ; জুলাই অ্যাম্বাসেডর ও সম্মাননা প্রদান; শর্টফিল্ম, ভিডিও প্রদর্শনী, পোস্টার ও স্লোগান প্রতিযোগিতা; “জুলাই ৩৬” ভাবনা প্রতিযোগিতা; রচনা, কবিতা, চিত্রাঙ্কন ও গ্রাফিতি প্রতিযোগিতা; রিমেম্বারেন্স ভিডিও শেয়ার; শহিদ পরিবার ও আহতদের সম্মাননা (ক্রেস্ট প্রদান); “জুলাই কর্নার” উদ্বোধন; “জুলাই ৩৬” স্মৃতিফলক নির্মাণ; “জুলাই শহিদ দিবস” উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ; “স্বৈরাচার মুক্ত দিবস” উদযাপন।

ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ রায় বলেন, ‘আমি জুলাই আন্দোলনের একজন আহত যোদ্ধা। আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার কোনো বিচার হয়নি। তারা এখনও মুক্তভাবে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাসব্যাপী আন্দোলন শুরু হোক লীগ বহিষ্কার কর্মসূচির মাধ্যমে।’ এ সময় তিনি আরও কয়েকটি প্রতিবাদী কর্মসূচির প্রস্তাবও দেন।

সভায় উপস্থিত ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিচার না হওয়া আমাদের জন্য লজ্জাজনক। ১৮জুলাই ছাত্রলীগ বহিষ্কার কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের নতুন অধ্যায় শুরু হোক।’

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শুধু ছাত্রলীগ নয়; বরং আন্দোলন দমনে পেছন থেকে ইন্ধনদাতা কিছু শিক্ষকেরও বিচার করার জরুরি।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ বলেন, ‘আপনি (ভিসি) সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডেকেছেন, কিন্তু উপস্থিত হয়েছে হাতে গোনা কয়েকজন। এর মূল কারণ, প্রতিটি বিভাগে ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। তারা চায় না জুলাই আন্দোলন সফল হোক। বিচার না হলে কোনো প্রোগ্রামই সফল হবে না।’

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘বিচার ছাড়া আমরা কীভাবে আওয়ামী দোসর শিক্ষকদের সঙ্গে এক প্রোগ্রামে বসব?’

উপাচার্য (অন্তর্বর্তীকালীন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম এ বিষয়ে কথা বলতে বিব্রতবোধ করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ‘টু দ্য পয়েন্ট’ অর্থাৎ মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের কর্মসূচি নির্ধারণের বিষয়ে কথা বলার জন্য বলেন। পরে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তবে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মুহসিন উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামী ১৮ জুলাই আমরা ‘লীগ বহিষ্কার’-এর ঘোষণা দেব। শিক্ষকদের বিষয়টি কিছুটা জটিল হলেও নীতিগতভাবে আমরা একমত হয়েছি।’

উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের কর্মসূচি নির্ধারণের বিষয়ে ববি উপাচার্য (অন্তর্বর্তীকালীন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলমের ডাকা আলোচনা সভায় মাত্র ১২ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এদিকে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিস্টের দোসর শিক্ষকদের সভায় আহ্বান করার অভিযোগ এনে সভাটি বর্জনের ঘোষণা দেন। পরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে বিশেষ সভা করা হয়।