দ্বীপবনে ভেকুর গর্জন, ধরা পড়লে সংবাদ না করার অনুরোধ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার

বরগুনায় সংরক্ষিত দ্বীপবনে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে
বরগুনায় সংরক্ষিত দ্বীপবনে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে © সংগৃহীত

বন সংরক্ষণ আইন স্পষ্টভাবে সংরক্ষিত বনের অপব্যবহারকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করলেও, বরগুনার প্রভাবশালীরা যেন আইনের ঊর্ধ্বে। সংরক্ষিত বনে চলছে প্রভাবশালীদের তাণ্ডব।

বিষখালী নদীর মাঝে জেগে ওঠা নতুন দ্বীপবনে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার সময় ক্যামেরায় ধরা পড়ে এ দৃশ্য। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় মাটি কাটার কাজ।

মোবাইল ফোনে খবর প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান চক্রের মূল হোতা বশির উদ্দিন পঞ্চায়েত, যিনি বরগুনা সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এই দ্বীপবনের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। নিষেধ করলে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও করেন তারা।

পরে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় একটি বার্জ, একটি সমুদ্রগামী ট্রলার ও একটি এক্সক্যাভেটর। তবে আশ্চর্যজনকভাবে এই পুরো ঘটনায় বন বিভাগ ছিল অনুপস্থিত। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা বলছেন, বন বিভাগের নাকের ডগায় এই ঘটনা ঘটলেও তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর বরগুনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তাকে পাওয়া গেলেও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বরগুনার সদস্য মো. মিজানুর রহমান বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এমন কার্যক্রম স্পষ্টভাবে অপরাধ। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধভাবে মাটি কাটার খবর আমরা পেয়েছি। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। অভিযানে জব্দ করা যন্ত্রপাতি ও নৌযান ইতিমধ্যে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। যারা এই কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশ ও বন আইন অনুযায়ী এই ধরনের কার্যকলাপ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে কারা এর পেছনে রয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। পরিবেশ ধ্বংস করে কেউ লাভবান হতে পারবে না।

উল্লেখ্য, বরগুনায় ৪ হাজার ১৮৩ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করে। 

কিন্তু এই বন প্রভাবশালী চক্রের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তা উপকূলের জীববৈচিত্র্য ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে যা উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য অশনিসংকেত।