বিবিসির ৩৫ মিনিটের ডকুমেন্টারি

‘এটা দেখে কেউ চোখের পানি আটকাতে পারবে না’

দ্য ব্যাটল ফর বাংলাদেশ ফল অব শেখ হাসিনা

জুলাই আন্দোলন
জুলাই আন্দোলন © এপি

গত বছরের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তাবাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ নির্দেশ দিয়েছিলেন—সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি ফোনকলের অডিও থেকে এমনটাই জানা গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বিশেষ ইউনিট বিবিসি আই ওই অডিও ভেরিফাই করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অডিওটি চলতি বছরের মার্চে অনলাইনে ফাঁস হয়। সেখানে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, তিনি নিরাপত্তাবাহিনীগুলোকে আন্দোলনকারীদের ওপর ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ নির্দেশ দিচ্ছেন। অডিওতে হাসিনা আরও নির্দেশ দেন, আন্দোলনকারীদের ‘যেখানে পাবে সেখানেই গুলি করবে।’

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাতে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি বিশেষ ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে। ডকুমেন্টারিটি দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পিএইচডি স্কলারস শেখ ফরিদ। তিনি বলেন, বিবিসি ৩৫ মিনিটের ডকুমেন্টারি দেখে আমার শরীর কাঁপছে এখনো।

সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কিছুক্ষণ আগে বিবিসি ৩৫ মিনিটের একটা ডকুমেন্টারি পাবলিশ করেছে। The Battle for Bangladesh: Fall of Sheikh Hasina এই শিরোনামে। এটা দেখে আমার শরীর কাঁপছে এখনো। এটা দেখে কেউ চোখের পানি আটকাতে পারবেনা। কত ভয়াবহ যুদ্ধ আর কত মানুষের তাজা প্রাণের বিনিময়ে আজকের এই বাংলাদেশ!’

ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে তিনি ৫টি পয়েন্টে উল্লেখ করেন:

১. শেখ হাসিনা সরাসরি গুলি করার যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটা বিবিসি বারবার প্রচার করেছে এবং বিবিসি ইন্ডেপেন্ডেন্টলি ভেরিফাই করে নিশ্চিত হয়েছে যে সেটা শেখ হাসিনার ভয়েস ছিল, এতে কোন সন্দেহ নেই।
২. বিবিসি অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের ধারণ করা ভিডিও প্রচার করেছে, এর প্রত্যেকটাই এই খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ হয়ে থাকল।
৩. বিবিসির এই ডকুমেন্টারিতে মূলত যাত্রাবাড়ির ঘটনাকে ফোকাস করা হয়েছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ইনভেস্টিগেট করেছে বিবিসি। সেদিন এই হত্যাকাণ্ডের দায় সেনাবাহিনীও এড়াতে পারেনা। মূলত সেনাবাহিনী সেখান থেকে সরে যাওয়ার পরেই পুলিশ নির্বিচারে গুলি করতে থাকে।
৪. যাত্রাবাড়ি থানার ওসি সরাসরি ডিবি হারুনের নির্দেশ পালন করতো। ডিবি হারুণকে যারা বিদেশে যেতে দিয়েছে, যারা দেশে থাকার পরেও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি, এই মৃত মানুষগুলোর রক্তের দায় এদের হাতেও আছে।
৫. বিবিসির এই ডকুমেন্টারি শেখ হাসিনাকে সবকিছুর জন্য দায়ী করেই শেষ করেছে। শেখ হাসিনার সেই ভয়েস বারবার প্রচার করেছে। পশ্চিমের কোন শাসক আর এই শেখ হাসিনার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেনা।

এমন ধরনের ভিডিও ডকুমেন্টারি বানানো শেখ ফরিদ বলেন, ইরানের বিপ্লব নিয়ে এখনো বিবিসির ডকুমেন্টারি-ই সবচেয়ে বড় এভিডেন্স। এমনকি বিবিসির মত ডকুমেন্টারি ইরানও বানাতে পারেনি। এখন বাংলাদেশ নিয়ে এই ডকুমেন্টারি দেখেই গুসবাম্প হবে, মনে হবে কোন যুদ্ধের সিনেমা দেখছি। অথচ রিয়েল ভিডিও, সাথে কেবল বিজিএম এড করা। 

তিনি আরও বলেন জুলাই নিয়ে আমাদের যতগুলো ভিডিও দেখি সবগুলোতে পিছনে গান এড করে দেয়া, অথবা ফেসবুক থেকে নামানো ভিডিও। অরিজিন্যালিটি থাকেনা, বিজিএম আবার সঠিকভাবে চুজ করা হয়না। আবার কিছু কিছু ভিডিওতে বিজিএমের সাউন্ড এত বেশি থাকে, র ফীল টা থাকেনা।

এই পিএইচডি স্কলার বলেন, জুলাই নিয়ে অন্তত দুই পর্বের (৫ ঘন্টার) একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানানো দরকার। একদম বিবিসির মত। এটা কেউ বানাতে পারলে শত কোটি আয় করতে পারবে। লিখে রাখেন। প্রতিটি হলে চলবে, আজীবন চলবে। ইউটিউবে চলবে, ওটিটিতে চলবে। শুধু বিবিসির মত এমন একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানান। সেই কোয়ালিটি এনশিওর করা লাগবে।

শেষে তিনি বলেন, তবে আমার ধারণ এই আন্দোলন নিয়ে বিবিসি আরো দীর্ঘ ডকুমেন্টারি নিয়ে আসবে। যাদের কারণে এত রক্ত ঝরলো এদের বংশধর কারো এদেশের মাটিতে আর ঠাঁই না হোক।