টানেল পার হতেই গলাকাটা ভাড়া, শিক্ষার্থী ও যাত্রীদের নাভিশ্বাস
- ০৮ জুলাই ২০২৫, ১৯:২১
মাত্র ৭ মিনিটের পথ। তবে এই টানেল পার হতে হলে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া। কর্ণফুলী টানেল ঘিরে এ যেন এক নিরব চাঁদাবাজির ফাঁদ। প্রতিদিন টানেল ব্যবহার করে যাতায়াত করা সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, বাস কিংবা মাইক্রোবাসে উঠলেই ‘টানেল ভাড়া’ নামে গলাকাটা অর্থ আদায় করা হচ্ছে, যার কোনো নির্ধারিত নিয়ন্ত্রণ নেই।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাসযোগে আনোয়ারা টানেল প্রান্ত থেকে পতেঙ্গা প্রান্তে পাড়ি দেয়ার সময় বাস চালক বাস হেল্পারদের দুর্ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। বাসে যাত্রী পুরোপুরি হওয়ার পরও অনেকক্ষণ ধরে যাত্রী আরো বেশি নেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা যেন তাদের নিত্যদিনকার কাজ। এমনকি চলার পথে বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা ও যাত্রী উঠানামা করায়, টানেল রোডে যদিও থামার কোন নিয়ম নেই। বাসের জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়া নেওয়ার বিষয়টিও স্পষ্ট। কয়েকজন যাত্রী ৩০ টাকা ভাড়া দিতে চাইলেও সেসব যাত্রীর সাথেও দুর্ব্যবহার করা হয়।
বিষয়টিকে ঘিরে যখন যাত্রীদের অভিযোগ ও দুর্ভোগের শেষ নেই। তখনি গেল বছরের নভেম্বর মাসে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক ইমনের উপস্থিতিতে একটি গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছিল। ওই শুনানিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,পরিবহন মালিক, যাত্রী, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের অংশগ্রহণে টানেল ভাড়া ৩০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব গৃহীত হয়।
তবে প্রস্তাব গৃহীত হলেও নয় মাস পেরিয়ে গেলেও আজও বাস ও মাইক্রোবাস ভাড়া নির্ধারিত হারে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত আসেনি।
যাত্রীরা বলছেন, ‘গণশুনানিতে প্রস্তাব হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তো আমরা কোনো পরিবর্তন দেখি না। এখনো কেনো এই বিষয়ে প্রশাসন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। বাসে গেলে ৫০ টাকা, মাইক্রোতে গেলে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দিতে হয়।’
কলেজছাত্র ইউসুফ আল জাওয়াদ বলেন, ‘প্রতিদিন যাতায়াতে ৫০ টাকা বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। আমাদের মতো ছাত্রদের জন্য এটা বড় বোঝা। কিছু বললে গায়ে পড়ে ঝগড়া করে বসে।’
অন্য আরেকযাত্রী মোবারক হোসেন বলেন, ‘সময়মতো গাড়ি ছাড়েই না আবার তার ওপর ১০ মিনিটের পথেই গুনতে হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। তাদের এই আচরণের প্রতিবাদ করলে গায়ে পড়ে ঝগড়া করে। বলে যাইলে যান, না যাইলে নামেন।’
তবে ভিন্ন কথা বলছে বাস চালকেরা। বাসচালক মো. জামাল বলেন, ‘আমরা নিজেরা টোল দিই, তেল বেশি খরচ হয়। আমাদের সমিতির নিয়ম অনুযায়ী এপার থেকে যাত্রী নিয়ে গেলে ওইপার থেকে খালি গাড়ি নিয়ে আসতে হয়। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে কিছু আদায় করা হয় না।’
আরেক বাসচালক মোজাম্মেল জানান, সময়মতো যাত্রী পাওয়া যায়না। সারদিন বসে থাকতে হয়। সকাল ও সন্ধ্যায় যাত্রী হলেও পুরোদিন সিরিয়ালে বসে থাকতে হয়। তার জন্য এই ভাড়া বাড়তি নয়।
রূপন সেন নামের এক মাইক্রোবাস চালকের দাবি, ‘টানেল উদ্বোধনের পর থেকেই এভাবে ভাড়া নিয়ে আসছি। এটা কোনো বাড়তি ভাড়া না। টোল খরচও বেশি, যাত্রীচাপ কম। হেলপারের বেতন, কোম্পানিকেও দিতে হয়। আমাদের সবকিছু হিসাব মেলাতে হয়।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য এমএ মনসুর বলেন, ‘গণশুনানিতে আমি ছিলাম না, পরে জানতে পারি বাজার মালিক সমিতির সভাপতি সহ একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। কমিটি পড়ে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। এটা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও টানেল কর্তৃপক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে হবে।’
নয় মাস আগের গণশুনানিতে অংশ নেয়া বেসরকারি কারা পরিদর্শক জুবাইরুল আলম বলেন, ‘আমরা গণ শুনানিতে ইউএনও মহোদয় ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়সহ একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলাম। কমিটি এখনো পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আসতে পারেনি। বিষয়টি প্রয়োজন হলে আমরা আবার প্রশাসনকে অবহিত করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাজার মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল হুদা জানান, ‘বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিকদের সাথে আমরা কয়েক দফয় বৈঠক করেছি। ভাড়া কামনার বিষয়টি তারা মানতে নারাজ, পরে তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দশ টাকা কমিয়ে চল্লিশ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে তারা এটি বাস্তবায়ন করেনি৷ আমরা এটি প্রশাসনকে কয়েকবার অবহিত করো কোন সমাধান পায়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস-কে জানান, ‘এ বিষয়ে জেলা থেকে একটি নতুন নির্দেশনা এসেছে, বাস মালিক শ্রমিকদের সাথে একটি বৈঠকে বসে একটি নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তারা যদি এই সিদ্ধান্ত না মানে তাহলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।’
টানেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘আমরা টোল নিই, ভাড়া নয়’। টানেলের টোল নির্ধারিত নিয়মে নেওয়া হয়। যাত্রী পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্ব পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের। আমাদের বিষয়টি দেখার এখতিয়ার নেই।