আন্দোলন দেখতে গিয়ে গুলিতে নিহত শাহিনুর, এক বছরেও মেলেনি বিচার
- ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৩৭
৫ আগস্ট ২০২৪। ঢাকার সফিপুর আনসার একাডেমির সামনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের গবরীকুড়া গ্রামের শহীদ শাহিনুর মাহমুদ শেখ (৪০)। জীবিকার তাগিদে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন তিনি। ভাড়া রিকশা চালিয়ে চলতো তার পরিবার।
সেদিন বিকালে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে স্ত্রীকে বলে যান, ‘আমি ছাত্রদের আন্দোলন দেখতে যাচ্ছি। আমি আসতাছি।’ কিন্তু সেই যাওয়া-ই হয়ে যায় শেষ যাত্রা। আর ফেরা হয়নি শাহিনুরের।
শাহিনুর ছিলেন মৃত শাহজাহান মামুদ শেখ ও মৃত অবিরন নেছার ছেলে। জীবনের কঠিন বাস্তবতায় নুয়ে না পড়ে, মাথা উঁচু করে শ্রম করে সংসার চালিয়ে গেছেন তিনি। কিন্তু এক বিকেলের গুলিতে থেমে যায় সেই সংগ্রামী জীবন।
আরও পড়ুন: ‘স্বৈরাচার হাসিনা আমার সুখের সংসারটা তছনছ করে দিছে—আমি তার ফাঁসি চাই’
শাহিনুরের স্ত্রী সালমা বেগম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী রিকশা চালাইয়া সংসার চালাইতো। বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে বললো আন্দোলন দেখতে যাবে, রাতে ফেরে নাই। আমি মেয়ে লইয়া খুঁজতে গেছি, পাই নাই। সকালে হাসপাতাল খুঁজেছি, তাও পাই নাই। পরে মাইকে ঘোষণা হইল অজ্ঞাত লাশ পাওয়া গেছে। গিয়া দেখি—ওটা আমার স্বামী। আজ এক বছর হয়ে গেল, কিন্তু বিচার পাই নাই। স্বামী মরার পর জীবন থেমে গেছে।’
শাহিনুরের ছোট মেয়ে মিম আক্তার বলেন, ‘বাবা না থাকার কষ্ট সেই বুঝে যার বাবা নাই। বাবা একা কষ্ট করে সংসার চালাইতো। এখন সব আম্মুর কাঁধে। আমরা অনেক একা হয়ে গেছি। আমি আমার বাবার হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
সালমা বেগম জানান, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লক্ষ, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে এক লক্ষ, জামায়াতে ইসলামি থেকে দুই লক্ষ টাকা, বিএনপি থেকে ২০ হাজার টাকা পেয়েছি অনুদান হিসেবে।’
আরও পড়ুন: ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গাড়ি তুলে দিয়ে হত্যা করা হয় কলেজছাত্র সৌরভকে
শাহিনুরের পরিবার এখন শুধু বিচার চায়—যেন আর কোনো পরিবারের কাঁধে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত শোক না নামে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শুরুতে এই আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, কিন্তু সরকার তা দমন-পীড়নের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়নের মাধ্যমে থামাতে গিয়ে সরকারই আরও প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস হস্তক্ষেপে প্রায় হাজারো নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন হাজার হাজার। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। পতন ঘটে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘদিন নিপীড়ন নির্যাতন চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।