প্রথমে ইউনিয়ন রুম, পরে স্টাফ রুমে নিয়ে ধর্ষণ— অভিযোগপত্রে যা লিখলেন ছাত্রী

কোলকাতার ল' কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণ
কোলকাতার ল' কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণ © সংগৃহীত

ভারতের কলকাতার কসবার একটি সরকারি আইন কলেজে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগ, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কলেজ ক্যাম্পাসেই এক ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এক নেতা। নাম প্রকাশ না করে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘জে’ হিসেবে। অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে আরও দু’জনের নাম— ‘এম’ ও ‘পি’, যারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং নীরব দর্শক কিংবা সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থী।

পুলিশে দেওয়া লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, ২৫ মে দুপুরে পরীক্ষা ফর্ম পূরণের জন্য কলেজে যান ওই ছাত্রী। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে তিনি যান ছাত্র সংগঠনের অফিসে। সেখানে ছিলেন অভিযুক্ত ‘জে’। অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে তিনি সবাইকে রুমে থাকতে বলেন, এবং তা-ই মানেন সবাই। অভিযোগকারিণীর দাবি, কলেজে ছাত্র সংগঠনের সব সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রক ছিলেন এই ‘জে’। তিনিই তাকে ছাত্রীদের সেক্রেটারির পদে বসান।

দুপুর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ইউনিয়ন রুমে থাকা লোকজন বেরিয়ে যেতে শুরু করেন। বিকেল ৪টা নাগাদ ছাত্রীটিও কলেজ গেটের দিকে রওনা হন। পথে কলেজের জিএস-এর সঙ্গে কথা বলার সময় ফের দেখা হয় অভিযুক্তের সঙ্গে। এক প্যাকেট বিস্কুট হাতে দিয়ে ফের ইউনিয়ন রুমে ডেকে পাঠান তিনি। জানান, জরুরি আলোচনা হবে। সেসময় রুমে উপস্থিত ছিলেন সাতজন।

আরও পড়ুন: ছাত্র সংগঠনের অফিসে কর্মীকে প্রেম নিবেদন, রাজি না হওয়ায় তাৎক্ষণিক ধর্ষণ নেতার

আলোচনা শুরু হয় অভিযুক্ত ‘জে’-র প্রভাব ও ব্যক্তিগত জীবন ঘিরে। কিছুক্ষণ পর ‘পি’ ছাত্রীটিকে রুমের বাইরে ডেকে এনে তার আনুগত্য পরীক্ষা করেন। তিনি জানান, ‘আমি ইউনিটের সঙ্গেই আছি।’ পরে রুমে ফিরে ‘জে’ তাকে জিজ্ঞাসা করেন, সব বুঝেছেন কি না। ছাত্রী জানান, ‘হ্যাঁ, দাদা, আমি ইউনিটের সঙ্গে আছি। কিছু ভাববেন না।’ কিন্তু এরপরই অভিযুক্ত বলেন, ‘না, ওসব কিছু নয়।’

অভিযোগকারিণী জানান, এরপর ‘জে’ তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। বলেন, ‘আমার গার্লফ্রেন্ডের পরে যদি কাউকে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসে থাকি, সেটা তুমি।’ তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানান, তার বয়ফ্রেন্ড আছে, তিনি তাকে ছাড়তে পারবেন না। এরপর তারা কিছুক্ষণ কথা বলে ফের রুমে ফিরে আসেন।

ঘটনার মোড় ঘুরে যায় সেখান থেকে। অভিযোগ, প্রথমে ইউনিয়ন রুমেই তার উপর শারীরিক নিপীড়ন শুরু হয়। পরে তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় কলেজের স্টাফ রুমে। সেখানেই সংঘটিত হয় ধর্ষণের ঘটনা। পাশেই উপস্থিত ছিলেন ‘এম’ ও ‘পি’। অভিযোগ, কেউ বাধা দেননি। বরং সহায়তা করেছেন। নির্যাতিতা লিখেছেন, ‘আমি পায়ে ধরে কেঁদে অনুনয় করি। কিন্তু কেউ কিছু শোনেনি। বরং হকি স্টিক তুলে ভয় দেখানো হয়।’

এই ঘটনায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন নির্যাতিতা। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি তদন্তাধীন। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষও এখনও এ বিষয়ে মুখ খোলেনি।