ইমরান খানকে সরাতে ‘মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা’, ষড়যন্ত্র দলের ভেতরেও
- ২৭ জুন ২০২৫, ২১:০০
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার একটি ‘সমন্বিত ষড়যন্ত্র’ চলছে বলে অভিযোগ করেছে তার দল। এই ষড়যন্ত্রে শুধু বাইরের নয়, দলের ভেতরের লোকজনও জড়িত বলে জানা গেছে। তবে পিটিআইয়ের নেতারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন—এই ধরনের কোনো তৎপরতা মেনে নেওয়া হবে না।
গভর্নরের শাসন জারির পরিকল্পনার অভিযোগ
খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গানদাপুর দাবি করেছেন, সেখানে গভর্নরের শাসন জারি করে ইমরান খানকে রাজনীতি থেকে ছিটকে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। তিনি একে সরাসরি একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
দলীয় ভাঙনের অভিযোগ ও পাল্টা বক্তব্য
পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেত্রী আজমা বুখারি অভিযোগ করেন, ইমরান খানকে তার নিজের বোন আলিমা খান ও দলের কিছু সদস্যই কোণঠাসা করে ফেলেছেন। তার দাবি, পিটিআইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া ইউনিটও ইমরানের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত।
আজমা বলেন, ‘যিনি একদিন নওয়াজ শরিফকে ‘সাইডলাইন’ করতে চেয়েছিলেন, আজ তিনিই নিজের ঘরেই অবাঞ্ছিত হয়ে পড়েছেন।’
তার আরও দাবি, বর্তমানে পিটিআই কেন্দ্রীয়ভাবে তিনটি এবং প্রাদেশিক পর্যায়ে আরও তিনটি ভাগে বিভক্ত। খাইবার পাখতুনখোয়ায় একদিকে জুনায়েদ আকবর, অন্যদিকে আতিফ খান, এবং আরেকটি গ্রুপ বিদ্রোহী সদস্যদের নিয়ে সক্রিয়।
পিটিআইয়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া
আজমার বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পিটিআই মুখপাত্র শেখ ওয়াকাস আকরাম। তিনি বলেন, “ইমরান খানকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে সরকার নিজেই অপমানিত হয়েছে। আল্লাহর রহমতে ইমরান খানকে মাইনাস নয়, বরং আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতি তাকে শীর্ষে স্থান দিয়েছে।”
ওয়াকাস বলেন, গত তিন বছরে বারবার পিটিআইকে ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু সবগুলো চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ইমরান খান এখন শুধু দলের নয়, জাতির নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
পাঞ্জাব সরকারের দুর্নীতি নিয়েও তিনি কঠোর সমালোচনা করেন। বলেন, ‘চুরি করা ম্যান্ডেট’ নিয়ে গঠিত এই সরকার এক লাখ কোটি রুপি লোপাটের মাধ্যমে কলঙ্কিত হয়েছে। আজমা বুখারিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তাকে বরং ‘পানামা কুইনের’ নেতৃত্বে কীভাবে সম্পদ লুট হচ্ছে, সে দিকে নজর দেওয়া উচিত।
অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও বাজেট ইস্যু
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গানদাপুর বলেন, “ইমরান খানই দলের নেতা। তিনি চাইলে এক মিনিটেই সরকার ছেড়ে দেবেন। তাকে বাদ দেওয়ার মানে দলের অস্তিত্বের ওপর আঘাত।”
তিনি আরও বলেন, ইমরানের পরামর্শ ছাড়া বাজেট পাশ করানো হয়েছে এবং দলীয় আলোচনাও ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, যা ছিল একটি রাজনৈতিক হাইজ্যাকের চেষ্টা। যদিও এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
গানদাপুর দাবি করেন, খাইবার পাখতুনখোয়ায় অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি করে গভর্নরের শাসন চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। মূল লক্ষ্য—ইমরান খানকে বাজেট প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখা।
তিনি জানান, ইমরান খান মুক্তি পেলেই দলের ভেতরের ষড়যন্ত্রকারীরা জনসমক্ষে উন্মোচিত হবেন এবং জনগণ তাদের বিচার করবে।
পিটিআই কি বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে?
বর্তমানে পিটিআই যে একাধিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত—তা ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও স্বীকার করছেন। দলটির অভ্যন্তরীণ কৌশলগত সংকট ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পিটিআই এখন একসঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বহিরাগত চাপে রয়েছে। ইমরান খানের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব সংকটে দল বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে কে নেতৃত্ব দেবে, তা নিয়ে এখন দলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।