গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত
- ২৫ জুন ২০২৫, ১৬:৩৮
দখলদার ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় একদিনে আরও ৮৬ জন নিহত। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত সাধারণ নাগরিক।
বুধবার (২৫ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, অবরুদ্ধ গাজায় মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন।
স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজাজুড়ে একাধিক হামলা চালায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালানো হয় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে। শুধু এসব এলাকাতেই প্রাণ গেছে ৫৬ জনের। দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে খাদ্য সংগ্রহে যাওয়া অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয় ২৭ জনকে।
আল জাজিরা জানায়, এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে 'গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন' (জিএইচএফ)-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান এসব কেন্দ্রকে আখ্যা দিয়েছেন “মৃত্যু ফাঁদ” হিসেবে।
এদিকে বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, গাজার মাঝামাঝি সালাহ আল-দীন সড়কে ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর হামলায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ১৪০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের পাশে আল-আওদা হাসপাতালে নিহতদের মরদেহ এনে রাখা হয়—এমন একটি ভিডিও ইনস্টাগ্রামে ছড়িয়ে পড়ে, যার সত্যতা নিশ্চিত করেছে আল-জাজিরার যাচাইকরণ বিভাগ ‘সানাদ’। একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে খান ইউনুসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সেও।
গাজা শহরের উত্তরাঞ্চল ও রাফাহ এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহে আসা আরও বহু মানুষ ইসরায়েলি সেনাদের গুলির মুখে পড়েছেন। আল-জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানান, “আল-শিফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ রক্তে সয়লাব হয়ে গেছে, অনেকেই চিকিৎসা না পেয়েই মারা গেছেন।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সেনারা ত্রাণবাহী ট্রাক আসার আগেই গুলি চালাতে শুরু করে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী আহমেদ হালাওয়া বলেন, “এটা ছিল স্পষ্ট গণহত্যা। আমরা পালানোর চেষ্টা করছিলাম, তখনও ড্রোন আর ট্যাংক থেকে গুলি আসছিল।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ঘটনাগুলো তদন্ত করছে এবং দাবি করেছে, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে “সন্দেহভাজনদের” কাছ আসার প্রতিক্রিয়াতেই গুলি চালানো হয়। তবে মানবাধিকার সংস্থা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, বেশিরভাগ হামলাই হয় সতর্কতা ছাড়াই।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেন, “মানুষ শুধু খাদ্য নেওয়ার চেষ্টা করায় হত্যা করা হচ্ছে। এ ধরনের সামরিকীকৃত ত্রাণ বিতরণ মানবিকতার ন্যূনতম শর্তও পূরণ করে না। এটি এক ভয়াবহ বাস্তবতা।”
তিনি আরও বলেন, “উভয় পক্ষের নেতৃত্বকে এখনই রাজনৈতিক সাহস দেখাতে হবে এবং এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে।”