জেলায় জেলায় বাড়ছে চিকুনগুনিয়া, পরীক্ষা শুধু ঢাকায়

চিকুনগুনিয়াবাহী এডিস মশা
চিকুনগুনিয়াবাহী এডিস মশা © সংগৃহীত

দেশজুড়ে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়লেও রাজধানী ঢাকা ছাড়া দেশের আর কোথাও এ ভাইরাসজনিত রোগ শনাক্তের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা নেই। কিট সংকটের কারণে সরকারি পর্যায়ে পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। ফলে রোগীরা জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলেও, সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা ছাড়াই ব্যবস্থাপত্র পাচ্ছেন।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ মে পর্যন্ত প্রাপ্ত ৩৩৭টি নমুনার মধ্যে ১৫৩টি ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের সবাই ঢাকার বাসিন্দা। কারণ, ঢাকার বাইরে পিসিআর পরীক্ষার কোনো সুবিধা না থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্দেহভাজন রোগীরা তালিকাভুক্তই হতে পারছেন না। ফলে প্রকৃত পরিস্থিতির পরিসংখ্যানও অজানা থেকে যাচ্ছে।

আইইডিসিআরের তথ্য বলছে, দেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এরপর ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে এবং ২০১৭ সালে নতুন করে বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই বছর প্রায় ১৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৭ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, আর জিকায় আক্রান্ত ১১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. হালিমুর রশিদ জানান, ২০১৭ সালের পর থেকে চিকুনগুনিয়ার কিট কেনা হয়নি। এর ফলে সরকারিভাবে দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। বর্তমান বাজেটেও কিট কেনার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলো নিজেদের উদ্যোগে কিট কিনে পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও জানান তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চিকুনগুনিয়ার নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। মূলত উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে হঠাৎ করে ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর, শরীরের জয়েন্টে তীব্র ব্যথা, মাথাব্যথা ও চামড়ায় র‍্যাশ।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. এফ. এম. মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, চিকুনগুনিয়ায় এমন ব্যথা হয় যে অনেকে দাঁড়াতেই পারেন না। জয়েন্ট ফুলে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে—ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত এই ব্যথা থাকতে পারে। নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা একমাত্র পিসিআর হলেও, তা বর্তমানে সরকারিভাবে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানে হচ্ছে। ফলে বহু রোগী চিহ্নিতই হচ্ছেন না।

মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ জানান, তাদের হাসপাতালে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু এবং করোনার চিকিৎসা চলছে। তবে চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা করার সক্ষমতা না থাকায় রোগীদের আইইডিসিআর বা আইসিডিডিআর,বি-তে গিয়ে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

চিকুনগুনিয়ার এ পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, জ্বর সেরে গেলেও অনেক রোগী মাসের পর মাস ব্যথায় ভোগেন। দেশে এ রোগের বিস্তার বাড়লেও, কিট, পরীক্ষা কিংবা পর্যাপ্ত প্রস্তুতির দিক দিয়ে সরকারি উদ্যোগ একেবারেই দুর্বল। এখনই পদক্ষেপ না নিলে, এ ভাইরাসজনিত রোগ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।