ইসরায়েলের জনসংখ্যা কত? বাংলাদেশের যে বিভাগ থেকেও ছোট এর আয়তন

ইসরায়েল
ইসরায়েল © সংগৃহীত

ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী রাষ্ট্র ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী এই দুই দেশের মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। ফলে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এরমধ্যে অনেকের আগ্রহ বেড়েছে ইসরায়েলের জনসংখ্যা, আয়তন কিংবা সেখানকার শহরগুলো সম্পর্কে।

এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বিবিসি বাংলা

ইসরায়েলের ভৌগোলিক অবস্থান:

ইসরায়েল আসলে কোন মহাদেশে অবস্থিত? এর উত্তর, এশিয়া মহাদেশেই। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে মধ্যপ্রাচ্যে। এর পশ্চিম দিকে ভূমধ্যসাগর এবং পাশে রয়েছে লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, মিশর এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড।

ইসরায়েলের উত্তরে লেবানন, উত্তর-পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্ডান ও দক্ষিণ-পশ্চিমে মিশর।

ইসরায়েলের সঙ্গে গাজা উপত্যকার পূর্ব ও উত্তর দিকের সংযোগ থাকলেও সেখানে কঠোর চেকপোস্ট রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ দিকে মিশরের সাথে গাজার সীমান্ত রয়েছে, যেখানে রাফাহ ক্রসিং অবস্থিত। এটিই গাজা ভূখণ্ডের জন্য একমাত্র সীমান্ত পথ।

তবে উল্লেখ্য, ইসরায়েলের পূর্বদিকে আবার ডেড সি বা মৃত সাগর রয়েছে। মৃত সাগরের অবস্থান ইসরায়েল, পশ্চিম তীর ও জর্ডানের সীমান্তবর্তী এলাকায়।

ইসরায়েলের জনসংখ্যা:

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা ৯৫ লক্ষ ১২ হাজার ৩৯৪ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে সাড়ে চারশোরও কম মানুষ থাকে।

ইসরায়েল একটি ইহুদি রাষ্ট্র হলেও সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অন্যান্য ধর্মের অনুসারীও বসবাস করেন। জার্মানির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান 'স্ট্যাটিস্টা' অনুযায়ী, জনসংখ্যার বিচারে দেশটিতে ইহুদীদের পরেই রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা।

এছাড়া, সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক খ্রিষ্ট ও দ্রুজ ধর্মেরও মানুষ বসবাস করে।

স্ট্যাটিস্টা'র ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান বলছে, তখন ইসরায়েলে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৭১ লাখের কিছুটা বেশি এবং মুসলিম ছিল প্রায় ১৭ লাখ ৭৪ হাজার। এই তুলনায় খ্রিষ্টান (এক লাখ ৮০ হাজার ৫০০ জন) ও দ্রুজদের (এক লাখ ৫১ হাজার ৩০০ জন) সংখ্যা বেশ কম।

তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোয় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ইহুদি আছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, বিশ্বের মোট ইহুদীদের অর্ধেকের কিছুটা কম সংখ্যক মানুষ ইসরায়েলে বসবাস করে। বাকি প্রায় অর্ধেক বাস করে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, ফ্রান্সের মতো দেশেও কিছুসংখ্যক ইহুদি আছে।

তবে ইসরায়েলের মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনি আরব বংশোদ্ভূত। তারা বর্তমানে ইসরায়েলের নাগরিক হিসেবেই বসবাস করে।

এদিকে, স্ট্যাটিস্টা'র গত বছরের আরেকটি পৃথক হিসেব বলছে, ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা বেড়ে ৯৮ লাখ হয়েছে এখন এবং এদের মাঝে দুই লাখের বেশি হলো আরব। যদিও ইসরায়েলে বসবাসরত আরবরা অভিযোগ করেন যে সরকারিভাবেই তারা বৈষম্যের শিকার হন এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকদের মতো ব্যবহার করা হয় তাদের সঙ্গে।

হিব্রু ইউনিভার্সিটির এক নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ইহুদি ইসরায়েলিদের ৮২ দশমিক সাত শতাংশ মানুষই ইরানের ওপরে আক্রমণ সমর্থন করেন। কিন্তু আরব ইসরায়েলিদের মধ্যে ৬৭ দশমিক নয় শতাংশ এর বিরুদ্ধে। ওই সমীক্ষাতেই উঠে এসেছে যে আরব ইসরায়েলিদের ৬৯ দশমিক দুই শতাংশ মানুষ হামলার ভয়ে ভীত, আর ২৫ দশমিক এক শতাংশ মানুষ হতাশ।

ইসরায়েলের আয়তন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং খুলনার চেয়েও ছোট:

ইসরায়েলের সরকারের দাবি অনুযায়ী, দেশটির আয়তন ২২ হাজার ১৪৫ বর্গকিলোমিটার। এ দিক থেকে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিভাগ চট্টগ্রামের চেয়েও ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি ছোট। এমনকি খুলনা বিভাগ থেকেও সামান্য ছোট।

সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, তাদের মোট আয়তনের ২১ হাজার ৬৭১ কিলোমিটারই ভূমি। দৈর্ঘ্যে এটি প্রায় ৪২৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থে মাত্র ১১ কিলোমিটার।

ইসরায়েলের দাবি করা এই আয়তনের মধ্যে রয়েছে মূল ভূখণ্ড, গোলান মালভূমি, জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজার মতো আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত অঞ্চলগুলোও রয়েছে।

এমনিতে ওয়েস্ট ব্যাংক বা পশ্চিম তীর (পাঁচ হাজার ৯৭০ বর্গ কিলোমিটার) এবং গাজা ভূখন্ড (৩৬৫ বর্গ কিলোমিটার) হচ্ছে দু'টি প্রধান ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত এলাকা। এই দুই ভূখন্ডের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এখানে, ওয়েস্ট ব্যাংক বা পশ্চিম তীরকে এই নামে ডাকা হয়, কারণ এটি জর্দান নদী এবং ডেড সী'র পশ্চিম তীরে। জেরুসালেম পর্যন্ত এর বিস্তার।

এদিকে, ইসরায়েলে সমুদ্র যেমন আছে, তেমন-ই এখানে পাহাড়, উর্বর ভূমি, মরুভূমিও রয়েছে। এগুলোর প্রত্যেকটিই একে অপরের বেশ কাছাকাছি অবস্থিত।

উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমে থাকা ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্বের ডেড সি পর্যন্ত যেতে গাড়িতে মাত্র ৯০ মিনিট সময় লাগে। আর গাড়িতে ইসরায়েলের একদম উত্তরের শহর মেটুল্লা থেকে দক্ষিণের এইলাত পর্যন্ত যাত্রায় সময় লাগে প্রায় নয় ঘণ্টা।